Header Ads

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি সংস্কারের পথে হেরিটেজ কমিশন


দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক হলেন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। যিনি একজন মহিলা হিসেবে সারাজীবন রক্ষণশীলতা ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাঁর লড়াই নারীসমাজের জাগরণে বিশেষ ভাবে সহায়তা করেছিল৷ কেবল একজন মেয়ে হওয়ার জন্য সে পড়তে পারবে না, ঘরবন্দী হয়ে থাকবে, গৃহিণী হয়ে সারাজীবন কাটাবে-- এই নিম্নতর চিন্তাভাবনার তিনি ঘোর বিরোধী ছিলেন। তখনকার সমাজের নারীদের জন্য বানানো প্রথাগত নিয়ম ভঙ্গ করেই তিনি জীবনপথে সফল হন।


তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজ মহিলা হিসেবে তাঁর ডাক্তারি পড়াকে সহ্য করতে পারতো না। তারা এতোটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিল যে বঙ্গবাসী পত্রিকায় তাঁকে হেয় করে একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিল, যাতে দেখানো হয় কাদম্বিনী তাঁর স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাকে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নীচে লেখা ছিল  কাদম্বিনীকে নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ অজস্র মন্তব্য। বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক মহেশ চন্দ্র পালের এই অসভ্যতাকে প্রশ্রয় দেননি কাদম্বিনী বা তাঁর স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতে অভিযোগ জানান তাঁরা। তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন ডাঃ নীলরতন সরকার, শিবনাথ শাস্ত্রীর মতো মানুষরা। বিচারে  মহেশ চন্দ্র পালের ছ'মাসের জেল ও একশো টাকা জরিমানা হয়। 

তিনি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম স্বাধীন প্র্যাকটিস করা মহিলা চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। এরপরই দ্রুত তিনি ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৮৮৮ সালে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল লিখেছিলেন তাঁর সম্বন্ধে। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য চিঠি লিখেন নিজের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে।

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ির ঠিকানা- ১৩ এ বিধান সরণি৷ অতীতের কর্নওয়ালিস স্ট্রিট৷ এই বাড়িটিকে এবার সংস্কার করতে উদ্যোগী হলো রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। 

হেরিটেজ কমিশন সূত্রে খবর, বাড়ির বর্তমান মালিক জনৈক গোবিন্দ গুপ্ত। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে৷ এবং তিনি যাতে কোনোভাবেই এই বাড়ি ব্যবসায়িক কারণে বিক্রি না করেন, সেই বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন। আগামী  মঙ্গলবার তিনি কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বাড়ি পরিদর্শনেও যাবেন। সেখানে বাড়িটি সংরক্ষণের বিষয়ে যাবতীয় আলোচনাও হবে। ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িকে এভাবে নষ্ট হতে দেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি। 

জানা যাচ্ছে, বাড়িটি সংস্কার করার পর সেখানে একটি ছোটোখাটো মিউজিক তৈরি করা হবে। যাতে সাধারণ মানুষ বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝতে পারেন। সাথে সাথে যেন অনুধাবন করতে পারেন সেখানে কোন কোন বিখ্যাত মানুষ বসবাস করতেন বা আসা-যাওয়া করতেন। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments