Header Ads

ডঃ সর্ব্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ও এক কলঙ্কিত অধ্যায়


সর্ব্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিনকে সারা দেশে 'শিক্ষক দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। অথচ সর্ব্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তাঁর এক বাঙালি ছাত্র যদুনাথ সিংহের গবেষণাপত্র চুরি করে গ্রন্থ লিখেছিলেন। এই অভিযোগ বিস্তরভাবে উঠে আসে৷  বিষয়টি আপনাদের কাছে অবিশ্বাস্য লাগলেও ঘটনাটি একবারেই সত্য ঘটনা। অনেকের হয়তো এটা শুনতে একটু মন্দ লাগবে, তবুও কয়েকটি তথ্য বিশ্লেষণ করার যথেষ্ট প্রয়োজন আছে।  


রাধাকৃষ্ণনের লেখা প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হলো 'ইন্ডিয়ান ফিলজফি'। এই গ্রন্থ আদপে তাঁর লেখা নয়। মীরাট কলেজের কোনও এক অখ্যাত বাঙালি তরুণ লেকচারার যদুনাথ সিংহ হঠাৎ লেখা চুরির অভিযোগ করে বসলেন ডঃ সর্ব্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের নামে। যদুনাথ দাবী করলেন, তাঁর দুই খণ্ডের গবেষণাপত্র 'ইন্ডিয়ান সাইকোলজি অফ পারসেপশন', যেটি তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তির জন্য ১৯২২ ও ১৯২৩ সালে দুই কিস্তিতে জমা দেন, সেখান থেকে চুরি হয়েছে লেখা। 

যদুনাথ সিংহ 'ফিলিপ স্যামুয়েল স্মিথ' সম্মান ও 'ক্লিন্ট মেমোরিয়াল' সম্মানের সাথে ১৯১৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক হন এবং ১৯১৭ সালে স্নাতকোত্তর পান। এরপরই তিনি ১৯২২ সালে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ স্টুডেন্টশিপের আবেদন করেছিলেন। যদুনাথ  সিংহ তাঁর গবেষণাপত্রের বাকি কিস্তিগুলি ১৯২৫ সালে গবেষণা সম্পূর্ণ হওয়া অবধি ধাপে ধাপে জমা দিতে থাকেন এবং এই গবেষণাপত্রের জন্যেই তিনি ১৯২৩ সালে গ্রিফিথ সম্মান ও ১৯২৫ সালে মুয়েট পদক পান৷  

যদুনাথের বক্তব্য অনুযায়ী, ডঃ রাধাকৃষ্ণনের বই 'ইন্ডিয়ান ফিলজফি ভলিউম ২' ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হলেও, স্বত্ত্ব লঙ্ঘনের বিষয়টি তিনি জানতে পারেন ১৯২৮ সালের নভেম্বর মাসে। ঐ বছরেরই ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখ তিনি একটি চিঠি লিখে 'মডার্ন  রিভিউ' পত্রিকায় এই প্রসঙ্গে গুরুতর অভিযোগ তোলেন। চিঠিটি ঐ পত্রিকার ১৯২৯ সালের জানুয়ারি মাসের সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।  

ডঃ রাধাকৃষ্ণন ১৯২৮ সালে আর একটি বই প্রকাশ করেছিলেন 'দি বেদান্ত অ্যাকর্ডিং টু শঙ্কর অ্যান্ড রামানুজ' নামে, যেটি আসলে তাঁর বই 'ইন্ডিয়ান ফিলজফি ভলিউম ২'র অষ্টম ও নবম অধ্যায়ের পুনর্মুদ্রন ছিল৷ এই মূল বইতেই প্রফেসর যদুনাথ সিংহের গবেষণা পত্র থেকে প্রচুর অনুচ্ছেদ হুবহু নেওয়া ছিল৷ প্রফেসর যদুনাথ সিংহের সৌভাগ্যক্রমে, তিনি তাঁর গবেষণাপত্রের কিছু অংশ ইতিমধ্যেই ১৯২৪ ও ১৯২৬ সালে মীরাট কলেজের  ম্যাগাজিনে প্রকাশ করে ফেলেছিলেন৷ 

১৯৩৯ সালে একই বিষয়ে মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে যদুনাথ সিংহের পরপর তিনটি চিঠি প্রকাশিত হয়। যে চিঠিগুলোর উত্তরও দেন সর্ব্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন। যার উত্তর ও যুক্তি খুব একটা সুবিধার মনে হয়নি কারোও কাছে। উল্টে তিনি মডার্ন রিভিউ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ সিংহের নামে তাঁকে অপদস্ত করার অভিযোগ আনেন।  

যদুনাথ সিংহ ১৯২৯ সালের ২২ শে আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন৷ যদুনাথকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন 'প্রবাসী' ও 'মডার্ন' পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। অনেকদিন মামলা চলার পর, একটা 'আউট অফ কোর্ট সেটলমেন্ট' করা হয়৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যদুনাথের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। এই প্রবল চাপ ও লড়াই করার মতো তেমন আর্থিক সঙ্গতি না থাকার কারণে যদুনাথ সিংহ একপ্রকার বাধ্য হলেন 'আউট অফ কোর্ট সেটেলমেন্ট' করতে। সম্ভবত, ১৯৩৩ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সামনে দুটো মামলারই 'ডিক্রি' জারি করে নিষ্পত্তি করা হয়৷ তবে কোন কোন শর্তে এই মামলার নিষ্পত্তি হয়েছিল তা আজও জানা যায়নি৷  

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা 

তথ্যসূত্র- রাউন্ড টেবিল ইন্ডিয়া, লেখক স্নেহাশিস ব্যানার্জির ব্লগ


No comments