বাতাসে কোভিড শনাক্তের যন্ত্র আবিষ্কার, পথ দেখালো বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি সংস্থা 'মেশিনসেন্স'
বাতাসে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি জানার জন্য সারা বিশ্বের প্রত্যেকটি বিজ্ঞান সংস্থা গবেষণা চালাচ্ছে। আমেরিকার বাল্টিমোর শহর, যে শহরেই অবস্থিত মহাকাশ গবেষণা ও রকেট উৎক্ষেপণের জন্য প্রসিদ্ধ সংস্থা 'নাসা'। আবার এই শহরেই রয়েছে রাইস বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ লক্ষ ডলার হাতে নিয়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয় সূক্ষ্ম বৈদ্যুতিক পাত ব্যবহার করে বাতাসে করোনার জীবাণুর উপস্থিতি জানার যন্ত্র তৈরি করেছে। আমেরিকার বাল্টিমোরের 'স্মিথডিটেকশন' নামের এক সংস্থাও তৈরি তাদের যন্ত্র বাজারে ছড়াতে।
এই বিশেষ রণক্ষেত্রে 'স্মিথডিটেকশন'-এর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ভারত-আমেরিকা স্টার্ট-আপ সংস্থা 'মেশিনসেন্স'। যে সংস্থার কর্ণধার একজন বাঙালি। তিনি হলেন খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী বিপ্লব পাল। তাঁর সংস্থার তৈরি যন্ত্রটি ভারত ও আমেরিকায় পরীক্ষামূলক ব্যবহারের শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই বাজারে আসছে তাঁর বাতাসে কোভিড শনাক্তকরণের এই বৈদ্যুতিক যন্ত্রটি।
স্মিথডিটেকশন বাতাসে ভাইরাসের উপস্থিতি জানার জন্য যতগুলো যন্ত্র নিয়ে কাজ করছে তার সবকটাই বাতাসের মধ্যে ভাইরাস আছে কী নেই তা ২০ মিনিটের মধ্যে জানান দিচ্ছে। কোভিডের সংক্রমণকে পুরোপুরি দমিয়ে দিতে প্রথম এই যন্ত্র উদ্ভাবনের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। যন্ত্রগুলো বাতাসে কোভিড চিহ্নিত করতে যদি ২০ মিনিট সময় নেয় তাহলে সেই সময়ের মধ্যেই বহু মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়বেন। এই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করেই মেশিনসেন্স তাদের গবেষণা আরম্ভ করেছিল। কিন্তু শেষমেশ সেই চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছে সংস্থাটি। তাঁরা তৈরি করে ফেলেছে পাঁচ মিনিটেই বাতাস শুঁকে কোভিড ভাইরাস আছে কিনা তা জানান দেওয়ার যন্ত্র।
বিপ্লব পালের সংস্থা 'মেশিনসেন্স'-এর সদর দপ্তর কলকাতার সেক্টর ফাইভে। 'মেশিনসেন্স' সংস্থাটির অধীনে বর্তমানে কাজ করছেন ১৫০ জন কর্মী। যাঁদের মধ্যে ১২ জনেরও বেশি পিএইচডি ডিগ্রিধারী। সংস্থাটি তৈরি হয়েছিল শিল্পে ব্যবহৃত নানান সেন্সর তৈরি করতে। কলকাতায় বিভিন্ন ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সম্প্রতি এদের তৈরি সেন্সরই ব্যবহার করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
মাইক্রোসফ্টের বিচারে সারা বিশ্বের মধ্যে ইন্টারনেট অফ থিঙ্কস স্টার্টআপের প্রথম দশে রয়েছে 'মেশিনসেন্স'। তাদের এই যন্ত্রটির মূল কাজই হলো বাতাস শুঁকে তাতে উপস্থিত জৈব ও অজৈব কণাকে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তিতে পৃথক করা। তাঁদের বৈদ্যুতিক ফুটপ্রিন্ট সহজেই বলে দিতে পারে যে বাতাসে কোভিড আছে কি নেই।
স্মিথডিটেকশন সংস্থার অ্যানথ্রাক্স ধরার যন্ত্র আমেরিকা সরকার থেকে শুরু করে বেসরকারি প্রায় সব ডাক সংস্থাই ব্যবহার করে থাকে। সেই যন্ত্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক যুদ্ধে মেশিনসেন্সের যন্ত্রটি কতটা সফল হবে তা সময়ই বলবে। তবে স্মিথডিটেকশনের যন্ত্রের দাম তৃতীয় বিশ্বে ব্যবহার করা খুবই খরচসাপেক্ষ। সেই তুলনায় তাঁদের যন্ত্রের দাম খুবই কম। স্মিথডিটেকশন যন্ত্রে বাতাসে ভাইরাস চিহ্নিত করতে সময় লাগছে ২০ মিনিট। কিন্তু 'মেশিনসেন্স' যন্ত্রে সময় লাগছে মাত্র পাঁচ মিনিট। এখানেই যন্ত্রটি বহুগুণ এগিয়ে। এই যন্ত্রটি দেখতে একটা ছোটো মশা মারার যন্ত্রের মতো। বাতাসে কোভিডের উপস্থিতি টের পেলেই জানান দিতে পারে নানান ভাবে।
আমেরিকাতে বিভিন্ন সংবাদপত্র ইতিমধ্যেই প্রশংসা করেছে 'মেশিনসেন্স'-এর যন্ত্রটির। তা স্বত্বেও বিপ্লব পাল কলকাতায় কাজটি করতে বেশি আগ্রহী৷ এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য "আর কোনো শহরে আছে এতো মেধা? কিন্তু সমস্যা হলো এঁদের কলকাতায় ধরে রাখা। এটাও আমাদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।"
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment