Header Ads

সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ ও সেভ দ্য মাদার আর্থের বার্তা নিয়ে সাইকেলে লাদাখ পাড়ি দুই বাঙালির


বাঙালিরা অলস। তাদের পরিশ্রম করার ক্ষমতা নেই। একথা বাঙালিদের প্রায়শই শুনতে হয়। যে কথা সম্পূর্ণ ভুল৷ কারণ বাঙালি যদি অলস হতো তাহলে সাইকেলে সাহারা, রিক্সা চালিয়ে লাদাখ, পায়ে হেঁটে এভারেস্টে চড়া, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করা, ফুটবলে ভারতসেরা হওয়া কিংবা বডিবিল্ডিং-এ মিস্টার ইউনিভার্স হওয়া কোনোটাই সম্ভব হতো না। বাঙালিরা যে অলস নয় সেই কথা আবারো প্রমাণ করছেন দুই বঙ্গসন্তান। সম্প্রতি যাঁরা সাইকেলে কলকাতা থেকে লাদাখ পাড়ি দিচ্ছেন। 


দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বার্তা বহন করে লাদাখের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছেন বাংলার দুই দামাল যুবক। নৈহাটির বাসিন্দা সজল বাউল ও বিরাটির বাসিন্দা বিপ্লব দাস দুজনে একসাথে সামিল হয়েছেন লাদাখ যাত্রায়। একদিকে সজল বাউল 'সেভ দ্য মাদার আর্থ' বার্তা নিয়ে পথে বেরিয়েছেন, অন্যদিকে তাঁর সঙ্গী বিপ্লব দাস 'সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ' বার্তা নিয়ে পথে বেরিয়েছেন।  

বিপ্লব দাস নিজের চোখে বহু দুর্ঘটনা দেখেছেন। ট্রাফিক আইন অমান্য করা, সিগন্যাল না মানা, তাড়াহুড়ো করে দ্রুতগতিতে একে অপরকে ওভারটেক করে গাড়ি অথবা বাইক চালানো, গাড়ি চালানোর সময় সিট বেল্ট না ব্যবহার করা, অসেচতন ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য প্রতিদিন তিলে তিলে নষ্ট হচ্ছে নানাবিধ মূল্যবান জীবন। কত কত সোনার সংসার বানের জলের মতো ভেসে যাচ্ছে। এতে সমাজেরও যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে। তাই তিনি এই বার্তা নিয়ে সাইকেলে চড়ে লাদাখের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। 


পৃথিবীর জলবায়ু ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে। প্রত্যহ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। অতিরিক্ত পরিমাণে পরিবেশ দূষণ বর্তমান প্রজন্মকে মৃত্যুমুখে পতিত করছে৷ মানুষ সবকিছুই বোঝে, সবকিছুই জানে তবুও যেন নিশ্চুপ৷ মানুষ শত চেষ্টা করেও নিজের অভ্যাস পাল্টাতে পারছে না। মানবসমাজকে দেখে মনে হয় পরিবেশ বাঁচানোর যেন কোনো দায় নেই মানুষের। কলকাতায় পরিবেশ দূষণ দিন দিন মাত্রা ছড়াচ্ছে। দিল্লির কথা তো ছেড়ে দিলেই হয়। কদিন আগেই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল যে দিল্লিতে অক্সিজেনের অভাবে মানুষজনকে অক্সিজেন কিনতে হচ্ছে। আমরা দেখেছি, একটি এলপিজি যুক্ত যানবাহন থেকে বছরে প্রায় ৪.৬ মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে গিয়ে মেশে যার ফলে  দূষিত হয় সবুজ প্রকৃতি। যার ফলে মানুষের স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটে। এমনকি মানুষের গড় আয়ুও হ্রাস পেতে থাকে।  


মানুষের অসাবধানতা আজকে মানুষকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর মানুষই শরীরের ঘাম ঝরিয়ে শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে। মানুষের বাঁচার জন্য যা প্রয়োজন তা আমাদের প্রকৃতি নিজে থেকেই দিয়েছে। অথচ মানুষ প্রকৃতির চরম ক্ষতি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। সকলেই তার সন্তানের সুরক্ষার কথা ভেবে অর্থ জমিয়ে রেখে যেতে চাই যাতে আমাদের তার সন্তানের কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু আমরা পরিবেশ সুস্থ্য রাখতে চাই না, যার ফলস্বরূপ মানুষের সাথে সাথে অন্যান্য জীব জন্তু তথা গোটা বাস্তুতন্ত্র কালক্রমে ধ্বংসের মুখে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই মানুষকে পরিবেশ নিয়ে সচেতন করা, প্লাস্টিক সঠিক জায়গায় ফেলা, জলের অপচয় না করা প্রভৃতি বার্তা বহন করেই সজল বাউল লাদাখের উদ্দেশ্যে সামিল। 

সজল বাউল ও বিপ্লব দাসকে লাদাখে পৌঁছাতে গেলে হাজারো বাঁধার প্রাচীর টপকাতে হতে পারে। কিন্তু তাঁদের গভীর আত্মবিশ্বাস যে তাঁরা সফল হয়ে বাড়ি ফিরবেন। কোনোরূপ বাঁধা তাঁদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। সাইকেলে মাইলের পর মাইল অতিক্রম করতে হবে তাঁদের। পথে যেতে যেতে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হবে তাঁদের। নৈহাটি ও বিরাটিবাসীরা অপেক্ষায় বসে এই দুই বঙ্গসন্তানের সফলতার জন্য। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments