রক প্রজন্মের কাছে 'ক্যাকটাস' মানেই আবেগের নাম, যে আবেগ অব্যাহত ২৯ বছর পরেও
শুধু তুমি এলে না বলে আমরা ভীষণ একা। সেটা তুমিও বোঝো আমিও বুঝি৷ তাই নীল নির্জনে চাই শুধু তোমায়। যদি তুমি না আসো তাহলে ভালো থেকো। তবুও ঠিক আছে। আর বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় সাবধানে রাস্তা পেরিও। তুচ্ছ আমি পক্ষীরাজের পিঠে চড়ে খুঁজে নেব রাতের পরী। যার সাথে আমি একটু উড়ে উড়ে যেতে যেতে বলবো ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ আমি। তারপর রাজার রাজা হয়ে লাশ কাটা ঘরে গাইবো উদিনের গান। তাই দেখে তুমি আবার বলো না বুদ্ধ হেসেছে। ও আমার বোধু রে চলো না একবার হ্যালোজেনের আলোতে ইচ্ছামতির পাড়ে হলুদপাখির ডানায় ভর করে ঘুরে আসি। অনেক আলোকবর্ষ পেরিয়ে ২৯ বছর পরেও বলছি কবি দাও কবিতা হবো।
উপরের কথাগুলোকে কোনো কবিতা ভাবলে ভুল হবে। এটা হলো গত ২৯ বছরের 'ক্যাকটাসে'র প্রতি রক প্রজন্মের কাব্যময় আবেগ। রকপ্রেমীদের শিরায় শিরায় আজও জমে আছে 'ক্যাকটাসে'র ঘ্রাণ।
দেখতে দেখতে ২৯ টা বছর অতিক্রম করে ফেললো বাংলা রক ব্যান্ড 'ক্যাকটাস'। আমাদের শৈশবের বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে ক্যাকটাসের সাথে। যাদের গান শুনলে গায়ে কাঁটা দেয় মানে শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জুড়িয়ে যায়। 'ক্যাকটাসে'র প্রতিটি গান কখনও প্রাচীন হওয়ার নয়৷ বাঙালি জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে 'ক্যাকটাসে'র গান।
সেই যে হলুদ পাখি বা শুধু তুমি এলে না এই গানগুলো যেন চিরনতুন। মনোমুগ্ধকর গানের কথা ও বৈচিত্র্যময় আবহসঙ্গীতের মিশেলে অনবদ্য ক্যাকটাসের প্রত্যেকটি গান। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা রক-ব্যান্ড 'ক্যাকটাস'। অল্পদিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যায় 'ক্যাকটাস'। বাংলার প্রথম পেশাদার রক ব্যান্ড হলো 'ক্যাকটাস'।
ক্যাকটাস গাছ প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকার ক্ষমতা রাখে। আমাদের সমাজের নানা প্রতিকূলতা রয়েছে। প্রতিনিয়ত খুনাখুনি, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, তোলাবাজি, মব লিঞ্চিং এর মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চলেছে। পদে পদে এখন বিপদের সম্ভাবনা। তারপরও আমরা সমস্ত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে বেঁচে থাকি৷ সেরকমই সমাজের সর্বস্ব প্রতিকূলতাকে জয় করতে গানকে সম্বল করে সারাটা জীবন বাঁচতে চেয়েছেন 'ক্যাকটাসে'র সদস্যরা। তাই ব্যান্ডের নামকরণ করা হয় 'ক্যাকটাস', "যেখান থেকে সঙ্গীত দৃশ্যটি মরুভূমির মতো জীবনকে বাদ দিয়েছিল।"
কখনো দল ভেঙেছে, আবার জোড়াও লেগেছে। কখনো দলে নতুন মানুষের আবির্ভাবও ঘটেছে। সকল উত্থান-পতনকে সাঙ্গ করে 'ক্যাকটাস' এগিয়ে চলেছে। 'ক্যাকটাস' কখনো থেমে থাকার কথা চিন্তা করেনা৷ রেশের ঘোড়ার মতো আজও ধাবমান তাঁরা। নিজেদের বারংবার ভেঙ্গে গড়ে বিভিন্ন লাইন আপ বানিয়ে গান তৈরি করে থাকে তাঁরা। দীর্ঘ ২৯ বছরে 'ক্যাকটাস' এ নানান পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও ক্যাকটাস আছে সেই ক্যাকটাসেই। এখনও তাদের কোনো কনসার্ট হলে এবং নতুন গান মুক্তি পেলে উন্মাদনা সেই আগের মতোই বিরাজমান।
সম্প্রতি 'ছিঃ ছিঃ ছিঃ' নামের একটি গানও রিলিজ করেছে 'ক্যাকটাস'। যে গানের মাধ্যমে বহুদিন পর ক্যাকটাসের দুই প্রাণপুরুষ সিধু ও পটাকে একসাথে গান রেকর্ড করতে দেখা গেল। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে গানটি৷ বর্তমানে যখন টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো বাংলা ব্যান্ড থেকে শত হস্তে দূরে তখন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা ক্যাকটাস নিজের মতো করেই করছে৷ ক্যাকটাস আছে সেই ক্যাকটাসে।।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment