Header Ads

বাংলার ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গেল স্ক্রিন 'প্রাচী'র নব্য রূপ টেক্কা দিচ্ছে মাল্টিপ্লেক্সকেও


মধ্য কলকাতার অনেক নস্ট্যালজিয়ার সাক্ষী 'প্রাচী' সিনেমা হল। ১৯৪৮ সালে জিতেন্দ্রনাথ বসুর হাত ধরে শুরু হয়েছিল প্রাচী সিনেমা হল। জন্মাষ্টমীর দিন এই হলের সূচনা করেছিলেন জিতেন বসু। তারপর ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর ছেলে দীপেন্দ্রনাথ বসু। এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। জিতেন বসু বেঁচে থাকতেই তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়। ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর নাতনি বিদিশা বসু। মাল্টিপ্লেক্সের আরাম, নানা চোখরাঙানি এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই প্রাচী সিনেমা হলে নানা পরিবর্তন এনে হলটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন বিদিশা বসু। 


শহরতলি ও তার আশেপাশে যখন একের পর এক সিঙ্গেল থিয়েটার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেখানে প্রাচী এক ব্যতিক্রমী সিঙ্গেল থিয়েটার। যে থিয়েটারের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা চলচ্চিত্র জগতকে অক্সিজেন জোগাচ্ছে। শিয়ালদহ স্টেশনের নিকটবর্তী এক ঐতিহ্যবাহী সিনেমাহল হলো 'প্রাচী'। সম্পূর্ণ ভিন্ন রাস্তায় হেঁটে উন্নত প্রযুক্তিতে ধরে রাখলো অতীতের নস্ট্যালজিয়াকে। 

কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সগুলির চোখে চোখ রেখে লড়াই করে সফল হচ্ছে প্রাচী। সম্পূর্ণ নতুন সাজে সেজে উঠেছে এই সিনেমাহল। প্রাচী এখন স্বমহিমায় বিরাজমান। নতুন আঙ্গিকে গড়ে ওঠা প্রাচী সিনেমাহলে ১৯ শে আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে ছবি দেখানো। যার একতলায় রয়েছে 'এম বাজার' শপিংমল এবং উপরতলায় রাজকীয় স্ক্রিন। লকডাউনে হলের যে সকল কর্মীদের অন্ন সংস্থান প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল তাদের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। সিঙ্গেল স্ক্রিনকে যে এভাবেও বাঁচানো সম্ভব এর আগে কেউই ভাবতে পারেননি। এক্ষেত্রে তাঁকে সিঙ্গেল স্ক্রিন বাঁচানোর পথপ্রদর্শকও বলা চলে। 

প্রাচী সিনেমাহল বহুকাল ধরেই বাংলা ছবির চলার জন্যই বিখ্যাত। সময়ের সাথে সাথে অন্যান্য ছবি এখানে আজকাল চললেও বাংলা ছবির চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।  প্রাচী সিনেমাহলের বিশেষত্ব হলো হলের নাম তারা বাংলাতে রেখেছে। আজও এখানে কম্পিউটারাইজড টিকিট ছাপানো হয় নিখাদ বাংলাতে। অন্যান্য ভাষার ছবি চললেও এই সিনেমাহল বাংলা ছবিকেই সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বাংলা ছবির নিজস্বতাকে তাঁরা নষ্ট হতে দেয়নি। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের কাছে প্রাচী যেন এক স্বর্গ। 

বাংলা ছবি 'মুখোশ'-এর মধ্য দিয়ে প্রাচীর নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। অন্যান্য হল মালিকেরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন বিদিশা বসুকে দেখে। তিনি কখনও এই সিনেমাহল বিক্রি করে দেওয়ার কথা চিন্তা করেননি। প্রাচীকে তিনি নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেন। প্রাচীর লাল গালিচা পাতা সিঁড়ি আর বড় স্ক্রিনের মহিমায় দর্শকেরা এখন প্রতিদিন ভিড় করে সিনেমা দেখতে আসছেন। প্রাচীর নবভাবে প্রত্যাবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়েছে টলিউডের একাংশ। 

উত্তম-সুচিত্রা জুটি হোক বা সত্যজিৎ রায়ের ছবি, সুপারস্টার প্রসেনজিৎ কিংবা দেবের ছবি সবকিছুরই সাক্ষী এই হল। বাংলা ছবির পুরানো সময় থেকে নতুন সময় প্রাচী কখনো থেমে থাকেনি। এককালে কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়ে ছবি দেখার জন্য টিকিট কাটতে হতো কিন্তু এখন তা ইতিহাস। এবার থেকে লোকে শপিংমলে জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে করতেই টিকিট কেটে ছবি দেখবেন। প্রাচীর বর্তমান চেহারা টেক্কা দিতে পারে যে-কোনো মাল্টিপ্লেক্সকে। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments