প্রখ্যাত তবলা বাদক শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনাবসান
করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন প্রখ্যাত তবলা বাদক পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুর ১ টা নাগাদ কলকাতার একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মাত্র ৫৪ বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। করোনা আক্রান্ত হওয়ার দরুন জুলাই মাসেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। তারপর তাঁকে একমো সাপোর্টে রাখা হয়৷ কিন্তু তাতেও তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়নি৷ বুধবার দুপুরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রখ্যাত তবলা বাদক শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাঁর করোনা ভ্যাকসিনের ২ টি ডোজই নেওয়া ছিল৷ তবু এই মারণ রোগ পিছু ছাড়েনি। জুন মাসেই এই ভাইরাস তাঁর শরীরে থাবা বসায়। স্বভাবতই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সবাই বিস্মিত। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরো আশঙ্কাজনক রূপ ধারণ করলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে তবলাও এক গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্র। এই তবলাকে ঘিরেও অনেকে স্বপ্ন দেখেন। তবলা যাদের জীবনে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম তবলা বাদক হলেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনো খ্যাতনামা শিল্পী পরিবারে জন্ম হয়নি তাঁর। তবু ছোট থেকেই তবলার প্রতি তাঁর অন্যরকম ভালোবাসা তৈরি হয়। মাত্র ৬ বছর বয়সে তবলায় তাঁর হাতেখড়ি হয়। তারপর একটু একটু করে অনুশীলনের মাধ্যমে মেলে ধরেছেন নিজেকে। বিশ্বের এমন কোনো বড় শিল্পী নেই, যাঁর সঙ্গে তিনি তবলা পরিবেশন করেননি। একই সঙ্গে বিশ্বের একাধিক শহরে আয়োজিত হয়েছে তাঁর একক অনুষ্ঠানও৷ তিনি মঞ্চ ভাগ করে নিয়েছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, উস্তাদ রশিদ খানেদের মতো শিল্পীদের সঙ্গে। এছাড়াও ডোভারলেন সঙ্গীত সম্মেলনের মতো মঞ্চে একক আসরেও তবলা শুনিয়েছেন তিনি। মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদের।
১৭ বছর বয়সে আইএসসি পরীক্ষা না দিয়ে ন'মাসের জন্য বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। মা ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁকে। সেই প্রসঙ্গে তিনি একবার বলেছিলেন, "এ রকম মায়ের জন্য আমার কিছু হল না"। যদিও তিনি তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের স্মৃতিতে তৈরি করলেন 'কাজলরেখা ফাউন্ডেশন'। বিশেষ ভাবে সক্ষম গুণী শিল্পীদের সাহায্য করে তাঁর সংস্থা। তিনি নিজে ভালো গানও গাইতেন। তাঁর রেকর্ডিংও রয়েছে।দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠান করার পাশাপাশি তৈরি করেছেন একাধিক ছাত্র। যাঁদের মধ্যে পুত্র অর্চিকও পড়েন।
শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আজ 'কাজলরেখা ফাউন্ডেশন' জুড়ে শুধুই শূন্যতা। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা সঙ্গীতমহল। শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে অর্চিক বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে বাবার চলে যাওয়ার কথা জানান। একটি শব্দে তিনি শুধু লিখেছেন, " হারালাম"।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment