Header Ads

বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে রিকশা চালিয়ে কলকাতা থেকে সিয়াচেন যাচ্ছেন সত্যেন দাস


রিকশা চলে লাদাখ। দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাসিন্দা সত্যেন দাস, যিনি রিক্সা চালিয়ে দু-দুবার কলকাতা থেকে লাদাখ যান৷ রিক্সা চালিয়ে লাদাখ পাড়ি দেওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু তা তিনি অনায়াসেই করে ফেলেছেন। ২০০৭ সালে রিকশা নিয়ে প্রথমবার মানালি পাড়ি দেন তিনি৷ এরপর ২০১৪ সালে বিশ্বশান্তির বার্তা দিতে তিনি শ্রীনগর হয়ে লাদাখের খারটুংলা পাস পর্যন্ত যান৷ সেই সময় বিশ্ব উষ্ণায়ণ নিয়ে মানুষকে সতর্ক করতে পথে চলার সময় ৫০০০ গাছের চারাও লাগান সত্যেনবাবু। খারটুংলা পাস পৌঁছাতে তার মাস তিনেক সময় লেগেছিল। 


রিকশা নিয়ে লাদাখ রওনাকালে পথেই জুটে যায় তাঁর দু'মুঠো খাবার। রিকশায় রাখা থাকে রান্নার সরঞ্জাম। যেখানে খাবারের কোনো ব্যবস্থা থাকে না, সেখানে নিজেই রান্নার ব্যবস্থা করে নেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ গাড়ি চলাচলের রাস্তা ছিল খারটুংলা পাস যার উচ্চতা প্রায় ১৮ হাজার ৩৮০ ফিট। রিকশায় করে এই জায়গায় পৌঁছানো একপ্রকার বিশ্বরেকর্ড। ২০১৭ সালে আবারো রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন লাদাখের উদ্দেশ্যে। দ্বিতীয়বারও রিকশা চালিয়ে লাদাখ পৌঁছে যান সাফল্যের সঙ্গে। দ্বিতীয়বার মানালি হয়ে লাদাখ গিয়েছিলেন তিনি। 

তিনি প্রথম যখন রিকশা চালিয়ে লাদাখ যাওয়ার কথা বলতেন তখন তাঁর আত্মীয়স্বজন, পাড়ার লোক ও প্রতিবেশী সকলেই তাঁকে উপহাস করতে থাকেন। তিনি সেই উপহাসকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেননি। দুর্গম গিরি দুস্তর মরু পেরিয়ে সকল প্রকার উপহাসকে বিসর্জন দিয়ে রিকশায় লাদাখ পৌঁছে রেকর্ড তৈরি করেন তিনি। সত্যেন দাসের পাশে সর্বদা থেকেছে পাড়ার একটি ক্লাব। যে ক্লাবের সদস্যদের সাহায্য ছাড়া এসব সম্ভব ছিল না তা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি৷ লিমকা ও গিনেস বুকের জন্য ইতিমধ্যেই ক্লাবের তরফে পাঠানো হয়েছে তাঁর নাম। ভবিষ্যতে কী হবে তা জানেন না তিনি। তবে আপাতত দেশের গণ্ডী পেরিয়ে মহাদেশে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সত্যেন দাস৷ 

পেশায় রিকশা চালক সত্যেন দাস এখন তারকা। ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের কাছে তিনি একপ্রকার অনুপ্রেরণা। তাঁর এবারের গন্তব্য সিয়াচেন। রিকশা চালিয়ে সিয়াচেন যাওয়ার কথা চিন্তা করাটা মোটেও সহজ নয়৷ তিনি অদম্য জেদ ও আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর করে ১ লা আগস্ট বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। নিউটাউনের বাবলাতলা থেকে যাত্রা শুরু করেছেন তিনি। সিয়াচেন পৌঁছাতে হলে তাঁকে প্রায় ৭ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করতে হবে। সময় লাগবে তিনমাস। যাওয়ার সময় তিনি মানালি হয়ে যাবেন৷ ফেরার সময় শ্রীনগর হয়ে আসবেন তিনি। সেভ ওয়াটার, সেভ নেচার ও সেভ আর্থের বার্তা নিয়ে তিনি বেরিয়েছেন। সঙ্গে নিয়েছেন ১০০০ মাস্ক। করোনা সম্পর্কে লোকেদের সচেতনতার বার্তা ছড়াতে পথে ১০০০ মাস্ক বিলি করবেন তিনি৷ 

সাইকেল রিকশায় লাদাখ যাওয়ার বেকর্ড সর্বপ্রথম তিনিই করেছেন৷ তিনিই পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি যিনি সাইকেল রিকশায় কলকাতা থেকে লাদাখ ভ্রমণ করেছেন। তাও আবার একবার নয় দু-দুবার৷ যারা একসময় তাঁকে নিয়ে বিদ্রুপ করতো তারাই এখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সত্যেন দাসকে। এখন সকলেই সর্বদা তাঁর সাফল্য কামনা করেন। তিনি নিজের কৃতিত্বের জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। তাঁর রিকশায় লাদাখ ভ্রমণ নিয়ে 'লাদাখ চলে রিকশাওয়ালা' নামের একটি জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে। সত্যেন দাস সফল হয়ে বাড়ি ফিরুক এই কামনা করি। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments