পোলিও আক্রান্ত তবুও ভারোত্তোলক হিসেবে প্যারা অলিম্পিকে বঙ্গতনয়া সাকিনা খাতুন
টোকিও অলিম্পিক শেষ হওয়ার পর গত ২৪ শে আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে টোকিও প্যারা অলিম্পিক। যেখানে ভারত থেকে অংশ নিয়েছেন ৫৪ জন অ্যাথলিট। যাদের মধ্যে রয়েছেন এক বঙ্গতনয়া। তিনি হলেন বসিরহাট বিধানসভার তালদি গ্রামের মেয়ে সাকিনা খাতুন। ৩২ বছর বয়সী সাকিনা শুধু বাংলারই নয়, সমগ্র ভারতের প্রথম প্যারা পাওয়ারলিফটার। ভারোত্তোলনে পদকজয়ের অন্যতম দাবিদার এবার তিনিই।
সাকিনা খাতুনের লড়াইটা মোটেও সহজ ছিলনা। নানান প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ভারতের প্যারা অলিম্পিক দলে। ২০১৪ সালে কমনওয়েলথ গেমসে প্যারা-বিভাগে ৬১ কেজি ডিভিশনে ভারতকে ব্রোঞ্জ পদক এনে দেন তিনি৷ ২০১৮ সালে দুবাইয়ে প্যারা পাওয়ারলিফটিং বিশ্বকাপে তিনি রূপো জিতে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। ৪৫ কেজি বিভাগে ৮০ কেজি ওজন তুলে সাকিনা দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেন দুবাইয়ে৷ আর কোনো ভারতীয় প্যারা পাওয়ারলিফটারের যে কৃতিত্ব নেই, তা আছে একমাত্র তাঁর মধ্যেই। অধিক যোগ্যতা থাকা সত্বেও কমনওয়েলথ গেমসের নির্বাচন থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আত্মহত্যার হুমকি দেন।
এক প্রান্তিক কৃষক পরিবারে জন্ম হয় সাকিনার। তাঁর শৈশব থেকেই আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কেটেছে। তাঁর বাবা পেশায় একজন দিনমজুর। লকডাউনে তাঁর দাদার হাতে তেমন কোনো কাজ নেই। সাকিনাও তেমন কোনো চাকরি পাননি কোনোদিন। ছোটোবেলা থেকেই সাকিনা পোলিও রোগে আক্রান্ত। পরিবারের বিচক্ষণতা আর সচেতনতার অভাবে পোলিও-র টিকাই খাওয়ানো হয়নি তাঁকে। মাত্র সাত বছর বয়স থেকেই কঠোরভাবে জীবন সংগ্রাম শুরু হয় তাঁর।
সাকিনা যখন পুরোপুরি ভাবে পোলিও আক্রান্ত হন তখন বিষয়টি তাঁর পরিবারের চোখে পড়ে। যদিও সেই সময় তাঁর অনেকটা বিলম্ব হয়ে গেছে। আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে সরকারি হাসপাতালেই শুরু হয় তাঁর চিকিৎসা৷ চারবার অস্ত্রোপচার করেও তাঁর খুব একটা লাভ হয়নি৷ পায়ের পেশি শিথিল থেকে যায় আগের মতোই। এতোকিছুর পরেও থেমে থাকেননি তিনি৷ জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসার জন্য তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন সাঁতারকে।
সাঁতারকে পেশা করতে চাইলেও তা সফল হয়নি। জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর পূর্বেই সাঁতারে তাঁর স্বপ্নভঙ্গ হয়। তাতে কী? হঠাৎ করেই একদিন তাঁর সাথে আলাপ হয় ভারতের কিংবদন্তি পাওয়ার লিফটার ফারমান বাশারের সাথে। তাঁর তত্ত্বাবধানেই পাওয়ারলিফটার হিসেবে নতুন জীবন আরম্ভ হয় সাকিনার৷ ২০১০ সালে উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার পর ব্যাঙ্গালোর পাড়ি দেন তিনি। সেখানেই নিতে থাকেন ভারোত্তোলনের প্রস্তুতি। তারপর থেকে আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
সাকিনা খাতুন বাঙালি হলেও প্রতিনিধিত্ব করছেন কর্ণাটকের হয়ে৷ ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো কিছুই যে অসম্ভব নয়, তার জীবন্ত উদাহরণ সাকিনা। প্যারা পাওয়ারলিফটিং বিভাগে ভারতের হয়ে খুব শীঘ্রই খেলতে নামছেন তিনি। সাকিনা খাতুনের পদক জয়ের দিকে তাকিয়ে এখন গোটা বাংলা।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment