রসকদম্বের জিআই স্বীকৃতির দাবিতে সরব মালদা জেলার বাসিন্দা ও মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা
ছোটো আকারের রসগোল্লা। সেটা ঢাকা ক্ষীরের পুরু আস্তরণে। ওপরে পোস্ত দানা ছড়ানো। দেখতে অবিকল কদম ফুলের মতো দেখতে এই মিষ্টিটি। মালদা জেলার বাসিন্দারা এই মিষ্টিকে চেনেন 'রসকদম্ব' নামে। মালদার মানুষ ভাবেন, বাড়িতে রসকদম্ব না থাকলে বোধহয় কৌলিন্য হারাতে হবে। তবে মালদার এই মিষ্টির সুখ্যাতি ছড়িয়ে আছে গোটা বাংলায়। এই মিষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে চৈতন্য মহাপ্রভুরও স্মৃতি।
শোনা যায়, সুলতান হুসেন শাহর আমলে যখন এই মালদার নাম ছিল 'গৌড়', সেসময় এই গৌড়ে আসেন চৈতন্য মহাপ্রভু। কেলিকদম্ব বৃক্ষের নীচে তিনি দীক্ষা দেন রূপ গোস্বামী ও সনাতন গোস্বামী কে। এই কেলিকদম্ব বৃক্ষের নামেই এই মিষ্টির নাম হয় 'রসকদম্ব'। রসে টইটুম্বুর এই মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়। পশ্চিমবঙ্গ রসগোল্লার উৎপত্তিস্থল স্বীকৃতি পাওয়ার পর মালদা অঞ্চলের মিষ্টি ব্যবসায়ীরা রসকদম্বের উৎপত্তিস্থল হিসাবে মালদাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি রেখেছেন।
এই মিষ্টির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ফ্রিজে না রাখলেও এই মিষ্টি সাতদিন পর্যন্ত টাটকা থাকে। দূর-দূরান্তে আত্মীয়ের বাড়িতেও সহজে নিয়ে যাওয়া যায় রসকদম্ব। বর্তমানে পোস্তর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক পোস্তর পরিবর্তে চিনির দানা ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ আবার পোস্তর পরিবর্তে ক্ষীরের গুঁড়ো ব্যবহার করেন। উৎসব-অনুষ্ঠানে, পুজো-পার্বণে মালদায় রসকদম্ব থাকা চাই-ই। মালদা তথা গোটা রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশেও খ্যাতি লাভ করেছে রসকদম্ব।
মালদায় যেমন ফজলি আম ও লিচু বিখ্যাত তেমনই মালদার রসকদম্ব মিষ্টিও বিখ্যাত। মালদার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা সাধারণ রসকদম্ব ও প্রস্থ কদম্ব বানিয়ে থাকেন। প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী মান্না দে ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও মালদার রসকদম্ব চেখে দেখে তুমুল প্রশংসা করেছিলেন। বহু চলচ্চিত্র তারকারাও প্রশংসা করেছেন রসকদম্বের।
সময়ের চোরাস্রোতে আজকে হারাতে বসেছে মালদার রসকদম্বের ঐতিহ্য। রসকদম্বের ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে আসতে রসকদম্ব উৎসবের দাবিও জানিয়েছেন। বহু ক্রেতা-বিক্রেতা। এছাড়াও মালদার প্রসিদ্ধ এই মিষ্টির পেটেন্ট পেতে দ্রুত আন্দোলন গড়ে তোলা উচিৎ বলে মনে করছেন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি রসকদম্বের জিআই স্বীকৃতির দাবিতে জেলার বাসিন্দা ও মিষ্টি ব্যবসায়ীরা সরব হয়েছেন। রসকদম্ব জিআই স্বীকৃতি পেলে মালদহের সুনাম আরও বৃদ্ধি পাবে।
রসগোল্লা, বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানা এবং জয়নগরের মোয়া বহু আগেই জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। নদীয়ার সরপুরিয়া ও সরভাজাও জিআই স্বীকৃতি পাচ্ছে। তাই মালদার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ রসকদম্বের জিআই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য লড়াই শুরু করে দিয়েছেন। রসকদম্ব জিআই স্বীকৃতি পেলে মালদার নাম ছড়িয়ে পড়বে গোটা দেশে। আমের পর মালদা হয়ে উঠবে মিষ্টিরও তীর্থক্ষেত্র। মালদার রসকদম্ব কী আদৌ জিআই স্বীকৃতি পাবে? সেদিকেই তাকিয়ে এখন মালদা তথা সারা রাজ্যবাসী।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment