Header Ads

মাত্র ২২ বছরে ১০০ কোটি টাকার মালিক বঙ্গসন্তান রণদীপ সাহা


শুধুমাত্র মাটি বিক্রি করেই লাখ টাকার ব্যবসা। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, শুধুমাত্র মাটি বিক্রি করে নতুন ধরণের ব্যবসা শুরু করলেন কলকাতার একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি সন্তান রণদীপ সাহা। তিনি যে সংস্থাটি তৈরি করেছেন তার নাম রেয়ার প্ল্যানেট, তাও মাত্র ২২ বছর বয়সে। 


শুরুটা হয়েছিল ২০১৫ তে তিনি যখন সবেমাত্র স্কুল থেকে কলেজে ভর্তি হলেন। আর পাঁচটা ছেলের মতো তিনিও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু তিনি ভাবতেন যে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ারিং করে তাকে সেই একই চাকরি করতে হবে। তাই তিনি একটু নতুন কিছু ভাবলেন, আর এই ভাবনা থেকেই শুরু হয় তার পথ চলা।

তিনি ছোটবেলায় অঙ্কনে ভর্তি হয়েছিলেন সেখান থেকেই অঙ্কনে শিক্ষাপ্রাপ্তি হয় তার।  কলেজে উঠে যখন তিনি দেখলেন তাঁর বাবার ব্যবসায়ী কিছু সমস্যার জন্য তার পরিবারের আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছে তখন তিনি ভাবলেন যে, এবার তাকে টাকা উপার্জনের জন্য কিছু না কিছু করতেই হবে।

তিনি দেখলেন একটি মাটির ভাঁড় যেখানে চা খাওয়া হয়, সেই মাটির ভাঁড়ে তিনি আঁকতে শুরু করলেন। প্রথমে তিনি তার পছন্দের ডিসি এবং মার্ভেল বিভিন্ন চরিত্র যেমন ব্যাটম্যান সুপারম্যান এদের নিয়ে ছবি আঁকলেন ছোট করে সেই মাটির ভাঁড়ে। তিনি দেখলেন এইভাবে তিনি এই মাটির ভাঁড় গুলোকে সুন্দর করে এঁকে বিক্রি করতে পারেন। 

একটি স্কুলে সম্প্রতি সেই সময় একটি এক্সিবিশন হয় সেখানে তিনি স্টল নিয়ে বসেন ৩০০ টাকা দিয়ে। তিনি ১০০ টি মাটির ভাঁড় কিনে সেই মাটির ভাঁড় গুলিতে অঙ্কন করে তিনি ২০০ টাকা দাম রাখলেন। ভাগ্যবশত প্রথম দিনেই তার ১০০ টি বার বিক্রি হয়ে যায়। ৩০০ টাকা থেকে তার উপার্জন হয় কুড়ি হাজার টাকা। এই ভাবেই তার প্রথম পথ চলা শুরু। তিনি অনলাইনে তার বিজনেস সম্প্রসারণ করার কথা ভাবেন এবং সেই দিনই একটি ডোমেইন কেনেন। নাম দেন রেয়ার প্ল্যানেট। কিন্তু এখানে তাকে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যেমন প্রায় ছমাস ধরে তার অনলাইন ডোমেইন থেকে বা ওয়েবসাইট থেকে কোনো কিছু বিক্রি হয় না। তিনি কিছুট হতাশ হয়ে পড়েন। তারপর তিনি ভাবেন আঞ্চলিক কিছু দোকানে তথা বইয়ের দোকানে তিনি তার প্রোডাক্টগুলো বিক্রি করবেন।

অনেক কষ্টের পর কলকাতার একটি দোকান অক্সফোর্ড তাকে ৫০ হাজার টাকার ভাড়ার বিনিময় একটি rack দেন, সেখানে তিনি তার প্রোডাক্ট বিক্রি করতে শুরু করেন। প্রথম এক মাসে তার আয় হয় প্রায় এক লক্ষ টাকা। এরপর তার মধ্যে কনফিডেন্স ফিরে আসে। তিনি গ্রামবাংলার মৃৎশিল্পীদের অগ্রিম টাকা দিয়ে এই কাজের জন্য আরও উৎসাহিত করেন।

তিনি শহরের এয়ারপোর্ট মলে মৃৎশিল্প জনিত যে সমস্ত প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন বলে মনে করেন, নিজের থেকেও বাংলার গ্রাম বাংলার সেই সমস্ত শিল্প ও শিল্পীদের উপার্জনের একটি পথ খুলে দেন তিনি। তিনি চেয়েছিলেন বাংলার শিল্পকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে এবং বাংলার গরীব মানুষদের কর্মসংস্থান বাড়াতে। তাই তিনি চলে যান দিল্লিতে এবং সেখানে এয়ারপোর্টে ডব্লু এইচ স্মিথ সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে তার ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটান। 

এখন ভারতের প্রায় প্রত্যেকটি বড় বড় সংস্থা এবং এয়ারপোর্টে যেখানেই ডব্লু এইচ রয়েছে সেখানেই রেয়ার প্লানেট-এর মৃৎশিল্প জাতীয় জিনিসপত্রগুলি বিক্রি হয়। তিনি এই মুহূর্তে বাংলা তথা ভারতের অন্যতম ব্যবসায়ীক মুখ তথা Entrepreneur. তার তত্ত্বাবধানে ৭৮ জন সরাসরি এবং প্রায় ৫০০০ জন শিল্পী যুক্ত। সেই সব শিল্পীর সংসার চালানোর দায়িত্ব এই ২২ বছর বয়সী তরুণের হাতে। তিনি বলেন, "ব্যবসা শুরু করতে শুধুমাত্রই টাকা লাগে তা নয় লাগে নিজের প্রতি  বিশ্বাস, অদম্য ইচ্ছে শক্তি এবং বুদ্ধিদীপ্ততা। 

তরুণ যুব সমাজের জন্য তার বার্তা, "নিজের ভাললাগার কাজ কখনো ছেড়ো না। ভালো লাগার কাজ আর তার সাথে সঠিক বুদ্ধি প্রয়োগ করে তোমরা নিজের জীবনের সফলতা এনে দিতে পারবে"।

প্রতিবেদন- গৌরব দাস


No comments