Header Ads

কালজয়ী ছড়া 'হাট্টিমাটিম টিম' আসলে ৫২ লাইনের ছড়া


বাঙালির সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন হলো বাংলা ছড়া। ছোটোবেলা থেকেই ছড়া শুনে বেশিরভাগ বাঙালি বাড়ির ছেলেমেয়েরা বড়ো হয়। মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচিনাচি, তাই তাই তাই, হাতি নাচছে ঘোড়া নাচছে, খোকা গেল মাছ ধরতে, আম পাতা জোড়া জোড়া এরকম অজস্র বাংলা ছড়া ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের অসীম আনন্দ দেয়। আজকাল এই ছড়াগুলি গান হিসেবেও বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে। সেগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। 


আমাদের ছোটোবেলার ছড়াগুলির মধ্যে অন্যতম একটি ছড়া হলো 'হাট্টিমাটিম টিম'। বাচ্চাদের মিষ্টি কণ্ঠে এই ছড়া শুনতে সকলেই ভালোবাসেন। আমরা সকলেই জানি এই ছড়াটি চার লাইনের। পাঠ্যবইতেও চার লাইনেই লেখা আছে ছড়াটি। কিন্তু আসল তথ্য হলো হাট্টিমাটিম টিম চার লাইনের ছড়া নয়, এটি ৫২ লাইনের একটি ছড়া। যেটা হয়তো আমরা অনেকেই পড়িনি। এই ছড়াটি চার লাইনের ছড়া হিসেবেই জনপ্রিয়তা পেলেও পুরো ছড়াটি খুব কম পাঠকই জানেন। আমরা অনেক সময় ছড়া পড়ি অথচ সেই ছড়ার সৃষ্টিকর্তাকেই ভুলে যায়। 

হাট্টিমাটিম টিম ছড়াটি লেখা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। এই ছড়াটি রচনা করেন ছড়াকার রোকনুজ্জামান খানা। হাট্টিমাটিম একপ্রকার পরিযায়ী হাঁস। শীতকালে জলা অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। ১৯৬৮ সালে বাংলা অ্যাকাডেমিতে সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাঁকে। তাঁর জন্ম ১৯২৫ সালের ৯ ই এপ্রিল অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলায়। ওপার বাংলাতে তিনি দাদাভাই নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি শিশু-কিশোরদের জন্যই বেশিরভাগ রচনা করে গেছেন৷ তাঁর রচনাবলীর মধ্যে হাট্টিমাটিম টিম সর্বাধিক জনপ্রিয়। ১৯৯৯ সালে প্রয়াত হন তিনি। বাঙালি তাঁকে সেভাবে মনে না রাখলেও সকল বাঙালি ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের ভোলেননা হাট্টিমাটিম টিম ছড়াটি শেখাতে৷ 

কালজয়ী এই ছড়াটির সম্পূর্ণ  অংশ তুলে ধরা হলো---- 

"টাট্টুকে আজ আনতে দিলাম
বাজার থেকে শিম 
মনের ভুলে আনল কিনে
মস্ত একটা ডিম।
বলল এটা ফ্রি পেয়েছে
নেয়নি কোনো দাম
ফুটলে বাঘের ছা বেরোবে
করবে ঘরের কাম।
সন্ধ্যা সকাল যখন দেখো
দিচ্ছে ডিমে তা
ডিম ফুটে আজ বের হয়েছে
লম্বা দুটো পা।
উল্টে দিয়ে পানির কলস
উল্টে দিয়ে হাড়ি
আজব দু’পা বেড়ায় ঘুরে
গাঁয়ের যত বাড়ি।
সপ্তা বাদে ডিমের থেকে
বের হল দুই হাত
কুপি জ্বালায় দিনের শেষে
যখন নামে রাত।
উঠোন ঝাড়ে বাসন মাজে
করে ঘরের কাম
দেখলে সবাই রেগে মরে
বলে এবার থাম।
চোখ না থাকায় এ দুর্গতি
ডিমের কি দোষ ভাই
উঠোন ঝেড়ে ময়লা ধুলায়
ঘর করে বোঝাই।
বাসন মেজে সামলে রাখে
ময়লা ফেলার ভাঁড়ে
কাণ্ড দেখে টাট্টু বারি
নিজের মাথায় মারে।
শিঙের দেখা মিলল ডিমে
মাস খানিকের মাঝে
কেমনতর ডিম তা নিয়ে
বসলো বিচার সাঁঝে।
গাঁয়ের মোড়ল পান চিবিয়ে
বলল বিচার শেষ
এই গাঁয়ে ডিম আর রবে না
তবেই হবে বেশ।
মনের দুখে ঘর ছেড়ে ডিম
চলল একা হেঁটে
গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে
ডিম গেলো হায় ফেটে
গাঁয়ের মানুষ একসাথে সব;
সবাই ভয়ে হিম
ডিম ফেটে যা বের হল তা
হাট্টিমাটিম টিম।
হাট্টিমাটিম টিম-
তারা মাঠে পারে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম।"

প্রতিবেদন- সুমিত দে


2 comments:

  1. ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। এটি বাংলার বহু পুরোনো লোকজ ছড়া। এবং মূল ছড়াটি চার লাইনেরই। 1962 সালে যদি ছড়াটা লেখা হয়ে থাকে তবে ১৮৯৯ সালে সিটি বুক সোসাইটি প্রকাশিত “খুকুমণির ছড়া” বইয়ের ১৩ তম সংষ্করণের ৩৭ নাম্বার পৃষ্ঠায় ছড়াটি সংকলিত হলো কি করে ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, মহাশয়।

      Delete