সমুদ্র দূষণ রোধে বাঙালি বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত বিশেষ তুলো শোষণ করবে তেল
সমুদ্র দূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। অতিরিক্ত পরিমাণে জাহাজ ও তৈলবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য জাহাজের তেল ও জ্বালানি সমুদ্রে মিশে পরিমিত পরিমাণে সমুদ্রের জলকে দূষিত করছে। অনেক সময় জাহাজডুবির জন্যও সমুদ্রের জলে মিশছে তেল৷ সমুদ্র দূষণের ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে জলজ প্রাণীদের। দমবন্ধ হয়ে বহু জলজ প্রাণীদের মৃত্যুও ঘটছে। সমুদ্র দূষণের প্রভাব কমবেশি উপকূলেও পড়ে থাকে। সমুদ্র দূষণ নিয়ে প্রচণ্ড চিন্তিত পরিবেশবিদ থেকে মৎস্যজীবীরা। সমুদ্র দূষণকে কীভাবে রোধ করা যায় তার উপায় আবিষ্কার নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণাগারে গবেষণা চলছে।
সমুদ্র দূষণ নিয়ে এবার কিছুটা উদ্বেগ হ্রাস করবে এক বাঙালি বিজ্ঞানীর আবিষ্কার। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী শুভেন্দু রায়চৌধুরী আবিষ্কার করলেন এক প্রকার তুলো। যে তুলো জলে মিশে থাকা তেল শোষণ করতে সক্ষম। ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টারে তিনি তৈরি করেছেন এই তুলোটি। এই তুলোটি এমন এক পদার্থের মিশ্রণে বানানো যা তেল ও জল দুটোকে পৃথক করে দেবে। তিনি সমুদ্র দূষণ রোধের গবেষণার সঙ্গে বহু দিন যাবৎ যুক্ত। তিনি চেষ্টা করছিলেন এমনই এক পদার্থ উদ্ভাবনের যা সমুদ্রের জল থেকে জলে মিশে থাকা তেল পৃথক করে দেবে। সেই ভাবনার বাস্তব প্রতিফলন এই অত্যাধুনিক তুলোটি।
উপর থেকে দেখলে মনে হবে আবিষ্কারটি খুব সহজ কিন্তু বাস্তবে তা বহু কঠিন থেকে কঠিনতর। পৃথিবীতে বিজ্ঞানের কোনো আবিষ্কারই সোজা নয়৷ দীর্ঘকালীন গবেষণা, শ্রম ও মস্তিষ্কের বুদ্ধিমত্তার ১০০ শতাংশ ব্যবহারই জন্ম দেয় নিত্যনতুন উদ্ভাবনের।
এই তুলোটি দেখতে সাধারণ তুলোর মতোই, তবে কাজ সম্পূর্ণ আলাদা। সাধারণ তুলো প্রধানত জল ও তেল একসাথে শোষণ করে। আর এই নতুন আবিষ্কৃত তুলোটি কেবল জলে মিশে থাকা তেল কিংবা তেল জাতীয় ক্ষতিকারক তরল শোষণ করতে পারে। গামা রেডিয়েশনের মাধ্যমে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে এই তুলোটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। একনিমেষে এই বিশেষ এক কেজি তুলো ২৫ কেজি তেল শোষণ করতে পারবে৷ এই তুলোটি কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ বার পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব। এই তুলো আম্লিক, লবণাক্ত মাধ্যম ও উচ্চ তাপমাত্রাতেও সমানভাবে কাজ করতে পারবে।
২০১৮ সালে বিজ্ঞানী শুভেন্দু রায়চৌধুরী আবিষ্কারটির পেটেন্টের জন্য আবেদন করেন। ২০২০ সালে গৃহীত হয়েছে সেই পেটেন্ট। এখন এই আবিষ্কারের উত্তরাধিকার তাঁরই হাতে। জলে ভাসমান ও নিমজ্জিত ভারী তেল শোষণ করতে সক্ষম এই তুলো জল পরিশোধনের ক্ষেত্রে যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment