স্বাধীন ভারতের প্রথম মহিলা অলিম্পিয়ান ছিলেন বাঙালি মহিলা নীলিমা ঘোষ
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। সেকেলে নারীদের খেলার সুযোগ যেভাবে ছিল না। "নারী হয়ে আবার ফুটবল ক্রিকেট খেলবে। মাঠে যাবে। হাস্যকর ব্যাপার।" যে সকল নারীরা সেকেলে খেলাধূলা করতেন তাদের এভাবে কটুক্তি করা হতো। এখনও কম-বেশি শোনা যায় এই কটুক্তিগুলো। সদ্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কেটে যায় ৫ বছর। এরপর ১৯৫২ সালে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে বসলো অলিম্পিকের আসর।
ভারতের ক্রীড়ার ইতিহাসে প্রথম মহিলা হিসেবে অলিম্পিক ট্র্যাক ইভেন্টে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন এক বাঙালি মহিলা। যার নাম নীলিমা ঘোষ। মাত্র ১৭ বছর বয়সে অলিম্পিক খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। ১০০ মিটার দৌড় ও ৮০ মিটারের হার্ডলসে অংশগ্রহণ করেন তিনি৷ তাঁর হাত ধরে তৈরি হয় নারী স্বাধীনতার নতুন যুগ। রক্ষণশীল পুরুষশাসিত সমাজকে তুড়ি মেরে তিনি পৌঁছে গেলেন অলিম্পিকের স্প্রিন্টে।
নীলিমা ঘোষের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৫ ই জুন। বাঙালির মনে তখন শুধুই ফুটবল আর ফুটবল। মেয়েদের ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না খেলার মাঠে পা রাখার। ছোটো পোশাকেও আপত্তি ছিল প্রায় সকলের। সার্কাস বা জিমন্যাস্টিকে গুটিকয়েক মেয়েদের দেখা গেলেও অন্যান্য খেলায় নৈব নৈব চ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতেও নীলিমা ঘোষকে প্রশিক্ষণ নিতে হতো। দেশ স্বাধীনের পাঁচ বছর পর ১৯৫২ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে হেলসিঙ্কিতে ডাক পড়লো তাঁর।
তিনি প্রথম হিটে ১০০ মিটার দৌড়েছিলেন। তিনি ১৩.৮০ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেন হিটে ও ফাইনালে ওঠার যোগ্যতা তিনি অর্জন করতে পারেননি৷ কয়েক দিন পরে নীলিমা ৮০ মিটার হার্ডলস বিভাগে প্রতিযোগিতা করেন। সর্বশেষে তার হিটের বিজয়ী ফ্যানি ব্লাঙ্কার কোয়েনের চেয়ে প্রায় দুই সেকেন্ড বেশি সময় নিয়ে পঞ্চম স্থানে খেলা শেষ করেন। মাত্র কয়েক পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে যাওয়ায় অলিম্পিকে পদক হাতছাড়া হয় তাঁর।
১৯৪০ সালে টোকিও অলিম্পিকে ইলা মিত্র প্রথম বাঙালি মহিলা তথা প্রথম ভারতীয় হিসেবে অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ঐ বছর অলিম্পিক বাতিল হওয়ায় ফলে শেষ পর্যন্ত অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ হারান। যদি ১৯৪০ সালে অলিম্পিক বাতিল না হতো তাহলে প্রথম বাঙালি মহিলা তথা ভারতীয় মহিলা হিসেবে ইলা মিত্রের নাম লেখা থাকতো স্বর্ণাক্ষরে। ১৯৫২ সালে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে নীলিমা ঘোষই প্রথম বাঙালি মহিলা হিসেবে অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করেন৷
অলিম্পিকে নীলিমার যাত্রা হয়তো হিটেই শেষ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু এক বাঙালি কন্যার হাত ধরেই যে আগামীদিনে ভারতীয় মহিলাদের অলিম্পিকে অংশগ্রহণের পথ রচিত হয়েছিল। নীলিমার সেই কৃতিত্ব কিন্তু অলিম্পিকে পদক প্রাপ্তির চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না।
তথ্যসূত্র- সববাংলায়, বঙ্গদর্শন, অলিম্পিক আর্কাইভ।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment