পুকুরে মণিপুরের পেংবা মাছের বাচ্চা তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন হলদিয়ার এক গৃহবধূর
কাজের ক্ষেত্রে কোনো লিঙ্গভেদ নেই। নারী বা পুরুষ সকলেই সব কাজ পারেন। বর্তমান সময়ে বাংলার নারীরাও পুরুষদের থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। বাংলার পুরুষদের মতো নারীরাও এখন স্বনির্ভর হতে চায়। এমনিতেই একটা অঞ্চলের উন্নতি তখনই হয় যখন সেই অঞ্চলের নারী-পুরুষ উভয়ই সমস্ত দিক থেকে এগিয়ে থাকে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া ব্লকের আরতী বর্মন, সুমিত্রা মন্ত্রী, নন্দরানী সাহু, প্রতিমা বর্মন ও সেফালি দলুই মান্নার মতো বেশ কিছু মহিলা মাছ চাষি যারা আজ অন্যান্য মহিলাদের কাছে দৃষ্টান্ত।
হলদিয়া ব্লক মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে বছর খানেক আগে হলদিয়া ব্লকে রাজ্যের প্রথম পেংবা মাছের চাষ হয়েছিল। ভারতের মধ্যে একমাত্র মণিপুর রাজ্যে পাওয়া যায় বিরল প্রজাতির এক মাছ পেংবা মাছ। যাকে মণিপুরের জাতীয় মাছ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই মাছকে মণিপুরী ইলিশও বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর মধ্যে ভারতের মণিপুর ছাড়াও চিনের ইউনান প্রদেশ ও মায়ানমারে দেখা মেলে এই মাছের। সেই পেংবা মাছের চাষে আমাদের রাজ্যের প্রথম পরিচিতি ঘটান হলদিয়ার মাছ চাষিরা। মাছ চাষিদের খবর ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। একেবারে শাকাহারী পেংবা মাছ চাষের প্রসার বেশ বাড়ছে। মাছটি খেতেও অত্যন্ত সুস্বাদু।
বছর খানেক আগে হলদিয়াতে রুই, কাতলার সঙ্গে মিশ্রচাষে অধিক লাভের আশায় চাষিরাও পেংবা চাষ শুরু করেন। পরে মিশ্র মাছ চাষ বা অন্যান্য মাছের সঙ্গে পেংবা মাছের চাষ সারা রাজ্যের মাছচাষিরা শুরু করেন৷ তবে চারা পাওয়া যেত শুধুমাত্র ভুবনেশ্বরে অবস্থিত মিষ্টি জল মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রে। সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের হ্যাচারী মালিকেরা হলদিয়া থেকে 'ব্রুডার' পেংবা মাছ সংগ্রহ করে প্রজনন উদ্যোগও নেওয়া শুরু করেছে। এদিকে সেই হলদিয়ারই এক গৃহবধূ বাড়ির পুকুরে পেংবা মাছের বাচ্চা তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
বসানচক গ্রামের এমনই এক সফল মহিলা হলেন বন্দিতা ভৌমিক৷ বাড়ির খিড়কি পুকুরেই তিনি পেংবা মাছের বাচ্চা তৈরি করেছেন। একজন গৃহবধূ বাড়ির কাজ সামলেও বাড়ির পুকুরের পরিচর্যা করে মাছ চাষ করা যায় সেটা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। কেবল বাড়ির চাহিদা মেটানোর জন্যই তিনি পেংবা মাছ চাষ করেন না, এখন তিনি পেংবা মাছের চারা বিক্রি করে উপার্জনও করেন।
তিনি বাড়ির পুকুরে উল্টানো মশারীর মতো দেখতে 'হাপা' ঝুলিয়েছেন। বড় প্রজননক্ষম পেংবা মাছ এনে তিনি বাড়ির পুকুরে হাপা করে ছেড়ে দেন। তারপর তিনি মাছগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করে বাচ্চা তৈরি করেছেন। তিনি নিয়ম করে পুকুরে জৈব জুস ও চুনও প্রয়োগ করেছেন। তাছাড়া মাঝে মধ্যে পাম্প চালিয়ে পরিমিত অক্সিজেনের জোগান দিয়ে তিনি মাছের বাচ্চাগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
বন্দিতা ভৌমিক স্বামীর ফিশারীতে গিয়ে কাজে হাত লাগান। তিনি মাছ চাষে হলদিয়া ব্লক মৎস্য দপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেন। মহিলাদের কীভাবে মাছ চাষে স্বনির্ভর করা যায় সেই বিষয়ে লাগাতার কর্মসূচী নেন হলদিয়ার ব্লকের মৎস্য আধিকারিক সুমন কুমার সাহু৷ তিনি সুমন বাবুর কাছে আধুনিক মাছ চাষের বিষয়ে শিখেছেন।
পেংবা মাছ চাষের সফলতার পর বাচ্চা উৎপাদনেও সফলতা মাছ চাষে হলদিয়াকে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে৷ স্বনির্ভর দলের মাধ্যমেও ব্লকে শুধু মাছ চাষ নয়, মাছের আচার, পাঁপড়, অ্যাকুরিয়াম তৈরি, জাল বোনা, মাছের আঁশ থেকে অলংকার প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়ে থাকে। সমস্ত মহিলা যদি উদ্যোগী হয়ে বাড়ির আশপাশের পুকুর বা ডোবাতে পেংবা মাছ চাষ করেন তাহলে আর্থিকভাবে তারা লাভবান হবেন। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে, আর পেংবা মাছের উৎপাদনও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন মৎস্য বিভাগের পদস্থ কর্তারা।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment