গাছেদের রাখি পরিয়ে ম্যানগ্রোভ ম্যানের উদ্যােগে পালিত হলো ম্যানগ্রোভ বন্ধন উৎসব
প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায় এ কথাটিও যেমন তিন সত্যি তেমনই এটাও সত্যি যে মানুষ প্রত্যহ নির্বিচারে সবুজ প্রকৃতিকে অত্যাচার করছে। আজকে পৃথিবীতে ঘটা প্রত্যেকটি দুর্যোগ আমাদের শিরায় শিরায় টের পাইয়ে দিচ্ছে 'অতি-উন্নত' আবার 'অতি-নির্বোধ' পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জীব মানুষ। যাঁরা নিজেদের প্রয়োজনে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে একটু একটু করে নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছে।
প্রকৃতির ওপর নৃশংস অত্যাচার হলেও প্রকৃতি নিজের খেয়ালে বহমান৷ সে তার নিরলস চেষ্টায় আজও গাছের শিকড়ে ভূমিক্ষয় আটকে, নদীর বুকে বন্যাকে ধারণ করে, ম্যানগ্রোভের আড়ালে সাইক্লোনকে যথাসাধ্য লুকিয়ে ফেলে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে আমাদের। সম্প্রতি সুপার সাইক্লোন 'আমফান'-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছে আমাদের। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ না থাকলে কোন ধ্বংসলীলা চাক্ষুস করতে হত মানবজাতিকে। ১৮০-১৮৫ কিমি গতিতে সুন্দরবনে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় বেগ কমিয়ে নেমে এল ১২০-১৩০-এ। কিন্তু সেই ম্যানগ্রোভই আজ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। পরিবেশবিদরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের অতন্ত্র প্রহরী ম্যানগ্রোভ। সৌরমণ্ডলের একমাত্র বাসযোগ্য এই গ্রহ উত্তপ্ত হচ্ছে। বরফ গলছে হিমবাহের। সমুদ্রের জলস্তর বেড়েই চলেছে ধীরে ধীরে। আর সমুদ্রের সেই বেড়ে যাওয়া জলস্তরই অশনী সংকেত দিচ্ছে ম্যানগ্রোভকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন প্রতি বছর সমুদ্রের জলস্তর ৩.৫-৪ মিলি মিটার করে বাড়ছে। সেটা যদি বছরে ৬ মিলি মিটারের কাছাকাছি চলে আসে তা হলেই বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করবে ম্যানগ্রোভের। কারণ ঐ পরিমাণ জলের মধ্যে নতুন গাছ আর জন্ম নিতে পারবে না।
ম্যানগ্রোভকে সারা পৃথিবীর উপকূলের রক্ষাকর্তা বলা হয়। পাশাপাশি, জৈব বৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এর অবদান অসামান্য। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কার্বন নির্গমনে এখনই লাগাম না টানা যায় তা হলে অনেকটা দেরি হয়ে যাবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।
কবির ভাষায়ঃ- দাও ফিরে সে অরণ্য/ লও এ নগর/ লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর/হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী/দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি।
সুন্দরবনে পরিবেশ রক্ষায় বাংলার ম্যানগ্রোভ ম্যান উমাশঙ্কর মণ্ডল লড়াই করছেন। তিনি সাড়ে ছয় লক্ষেরও বেশি ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ রোপণ করেছেন। তাঁর উদ্যােগে সম্প্রতি পালিত হলো ম্যানগ্রোভ বন্ধন উৎসব। যে উৎসবে এগিয়ে আসেন সুন্দরবনের সাতজেলিয়ার লাহিড়ীপুর অঞ্চলের পরশমনির গ্রামের মায়েরা। যারা নতুন ভাবে পথ দেখাবে। যারা বিশেষভাবে ম্যানগ্রোভ বাঁচাতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
ম্যানগ্রোভ ম্যানের ম্যানগ্রোভ বন্ধন আসলে রাখিবন্ধন উৎসব। তিনি রাখিবন্ধন উৎসব একটু অন্যভাবে পালন করেছেন। বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ গাছে গ্রামের মহিলারা রাখি পরিয়ে দিলেন। তাঁদের কথায়, "আয়লা আমফানে আমাদের একমাত্র ভরসা এই ম্যানগ্রোভ। এর চেয়ে আপন আর কে?" তাই তাঁরা ম্যানগ্রোভ গাছেদের আপনজন হিসেবে রাখি পরালেন। সাথে ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েছেন তাঁরা৷ এমনকি এদিন বাচ্চারাও গাছেদের রাখি পরাতে এগিয়ে এসেছিল৷
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment