Header Ads

'চাওয়া-পাওয়া' ছবি দিয়ে পথচলা, বিক্রির পথে 'পদ্মশ্রী' সিনেমাহল


পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর 'সিনেমাওয়ালা' ছবিতে বাংলার মাটিতে কীভাবে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক সিঙ্গেল স্ক্রিন তারই প্রেক্ষাপট দেখিয়েছিলেন। বাংলা ছবি একশো বছর পেরিয়ে গেছে। এই একশোটা বছরে নানান উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বাংলা ছবি এগিয়ে চলেছে। বর্তমান সময়কালে মাল্টিপ্লেক্সের দাপাদাপিতে একের পর সিঙ্গেল স্ক্রিনে তালা পড়ছে। বহু সিঙ্গেল স্ক্রিন এক এক করে হারিয়ে যাচ্ছে। সিঙ্গেল স্ক্রিন হলো চলচ্চিত্রের মূল স্তম্ভ। মাল্টিপ্লেক্সে চলচ্চিত্রের টিকিটের দাম সিঙ্গেল স্ক্রিনের টিকিটের দ্বিগুণ। মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে ছবি দেখার সামর্থ্য সবার থাকেনা৷ অল্প দামে বহু মানুষ সিঙ্গেল স্ক্রিনে সাধারণত ছুটে যান, কিন্তু সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে তা ইন্ডাস্ট্রির জন্য বেশ ক্ষতিকর। 


ইতিমধ্যেই কলকাতায় মিত্রা, এলিট, মালঞ্চ, রক্সি-র মতো জনপ্রিয় সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। মাল্টিপ্লেক্সের যুগে তবুও এই হলগুলো চলছিল কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে বহু হল বন্ধ হয়েছে। তার থেকেও গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো করোনা মহামারী সিঙ্গেল স্ক্রিনের মেরুদণ্ড প্রায় ভেঙ্গে দিলো। বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার ছাপ গ্রাস করছে ছবির টেকনিশিয়ান থেকে প্রযোজকদের। 

টালিগঞ্জের প্রথম সিঙ্গেল স্ক্রিন হলো 'পদ্মশ্রী'। সম্প্রতি এই হলটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেন হলের মালিক। ১৯৬০ সালে প্রযোজক-ডিস্ট্রিবিউটর  নারায়ণ সাধুখাঁ এই হলটির জন্ম দেন দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া এলাকায়। এই হলের আসন সংখ্যা ছিল ৭২০। উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত 'চাওয়া-পাওয়া' ছবির মধ্য দিয়ে এই হলের পথচলা শুরু হয়। ৫০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা অবধি টিকিটের দাম হতো এখানে। একসময় দর্শকদের লম্বা লাইন লেগে থাকতো হলের সামনে৷ ছবি দেখার জন্য হলের ভেতর জনসমুদ্র হতো। 

'পদ্মশ্রী' সিনেমাহলে দর্শকদের  ছবি দেখার ভিড়ের সূত্র ধরে এই এলাকায় ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে বান্টি, মধুবন, মহুয়া, মালঞ্চের মতো সিনেমা হলগুলি। 'চাওয়া-পাওয়ার দিনগুলি এখন ইতিহাস। সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলো যেন সব মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুণছে। চোখের সামনে এখন শুধুই অন্ধকার নেমে এসেছে 'পদ্মশ্রী'র বুকে। কত কত রঙিন দিনের সঙ্গী ছিল এই সিনেমা হল৷ আজ শুধুই শূন্যতা। সিনেমাপ্রেমী বহু মানুষ ভারাক্রান্ত 'পদ্মশ্রী' বিক্রি হতে চলার খবরে৷  

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে সেই যে তালা পড়লো, তারপর এখনও সেই তালা ঝুলেই আছে হলের সদর দরজায়৷ পদ্মশ্রী হলের মালিকরা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন- "মাল্টিপ্লেক্সের যুগে সিঙ্গেল স্ক্রিন চালানো ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে। করোনা আবহে কার্যত সিঙ্গেল স্ক্রিন পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই হলটি বিক্রি করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই। যে বা যারা এই হলটি কিনবেন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন আদৌ এটা সিনেমা হল থাকবে কি থাকবে না।" 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments