Header Ads

মশার লার্ভা বিনাশকারী মশাখেকো ছত্রাক বানিয়ে তাক লাগালেন বাঙালি গবেষক


পতঙ্গদের মধ্যে মশা একপ্রকার বিপজ্জনক পতঙ্গ।  যার কামড়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু,  চিকনগুনিয়ার মতো রোগের সৃষ্টি হয়। যে রোগগুলিতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো মশা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে অনেক ভুল তথ্যও পরিবেশন করা হয়৷ এমন অনেক বিষয় আছে যা বিজ্ঞানীরাও এখনও বুঝে উঠতে পারেন নি৷ মশার নতুন নতুন প্রজাতি এখনও আবিষ্কৃত হচ্ছে ও এদের ব্যাখ্যা চলছে। যে প্রজাতিগুলিকে আগে ভেক্টর মনে করা হতো না, সেগুলিও এখন ম্যালেরিয়া সংক্রমণের সঙ্গে যুক্ত৷ 


প্রায় সাড়ে তিন হাজার মশার প্রজাতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। আমাদের মাথায় উপদ্রব সৃষ্টিকারী যে মশার কথা সবার প্রথমে আসে তা হলো কিউলেক্স প্রজাতির মশা। রাতের বেলায় এদের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷ এই প্রজাতির মশা নানান স্থানে জমা জলের মধ্যে একসঙ্গে একাধিক ডিম পাড়ে৷ আবার কিছু কিছু অঞ্চলে এই মশাগুলি পশ্চিম নাইল ভাইরাস ও জাপানিজ এনকেফেলাইটিস রোগের সঙ্গে জড়িত। 

অন্যদিকে এডিস মশা দিনের বেলায় অত্যন্ত সক্রিয়। এই কালো মশাদের ওপর সাদা বা রূপোলী দাগ থাকে। কোনো আবর্জনার পাত্র, পরিত্যক্ত জায়গায় পড়ে থাকা টায়ার কিংবা চাকা, গাছের গর্তে এরা ডিম পাড়ে। এরা জলের মধ্যে সরাসরি ডিম পাড়ে না৷ এরা জলের স্যাঁতস্যাঁতে অংশে একটি ডিম পাড়ে। এই মশাগুলি ডেঙ্গু, হলুদ জ্বর ও জিকার মতো বিপজ্জনক ভাইরাস ছড়ায়। 

মশাদের উপদ্রুব কমানোর জন্য প্রয়োজন আরো উন্নতমানের ব্যবস্থা। তাই মশার বংশকে ধ্বংসকারী ছত্রাক আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রহড়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ সেন্টেনারি কলেজের অধ্যাপক তথা বিজ্ঞান গবেষক ড. স্বপন ঘোষ। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া রোগসৃষ্টিকারী যে-কোনো মশার লার্ভাকে দমন করতে সক্ষম এই ছত্রাক। এক চৌবাচ্চা ভর্তি লার্ভাকে কয়েক  ঘন্টার মধ্যেই এক ফোঁটা ছত্রাকের সলিউশন ধ্বংস করে দেবে। 

ছত্রাককে লোকেরা চরমতম ভয়ঙ্কর বলেই জানে৷ তার কারণ হলো ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগের সংক্রমণ। যে রোগটির জন্যই মানুষজন ছত্রাকের নাম শুনলে আঁতকে উঠছে। তবে এই ছত্রাকও যে কখনো কখনো মানুষের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে হাতকলমে তা দেখিয়ে দিলেন ড. স্বপন ঘোষ। সম্প্রতি নেচার পত্রিকার সায়েন্টিফিক রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গবেষণাপত্রটি৷ এই ছত্রাকের নাম হলো 'ট্রাইকোডার্মা অ্যাসপেরেলাম'। এই ছত্রাকটি এতোদিন পর্যন্ত কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 

চার বছর ধরে তিনি ও তাঁর ছাত্ররা এ বিষয়ে গবেষণা করছেন৷ তারাই প্রথম সামনে আনলেন মশার লার্ভা ধ্বংসকারী এই ছত্রাকটি। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় গবেষণা চালানো হয়েছে। একাধিক লার্ভার আঁতুড়ঘরে এই ছত্রাক প্রয়োগ করে দারুণ ফলও পাওয়া গেছে। মশার লার্ভা জমা জলে ট্রাইকোডার্মা অ্যাসপেরেলামের সলিউশন ফেলে দিলেই ছত্রাকের স্পোর বা রেণু লার্ভার গায়ে আটকে পড়ে। এর পরেই ছত্রাক অঙ্কুরিত হতে শুরু করার সাথে সাথেই কাইটিনেজ-প্রোটিয়েজ নামে দুটি উৎসেচক নির্গত হয়, যা লার্ভার সেল ওয়াল ভেঙে গিয়ে ভেতরের ইমিউনিটি সিস্টেম নষ্ট করে দেবে। যার ফলে তৈরি হবে মাইসেলিয়াম বা অনুসূত্র। সেটিই লার্ভার মূল ঘাতক৷ 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments