ভারতে আধুনিক ডায়াবেটিস চিকিৎসার জনক হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন ডাঃ জেপি বসু
ভারতে ডায়াবেটিসের আধুনিক চিকিৎসার জনক হলেন ডাঃ জ্যোতিপ্রকাশ বসু। যিনি কলকাতা শহরে বসে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এ প্রথম কোনো ডায়াবেটিস রোগীকে ইনসুলিন দিয়েছিলেন৷ ১৯২৩ সালে পৃথিবীতে প্রথম ইনসুলিন আবিষ্কারের দুই বছর পর ঘটেছিল এই ঘটনা। দেশের মধ্যে ডায়াবেটিস ক্লিনিকও চালু করেছিলেন ডাঃ জেপি বসু। বহুদিন উপেক্ষিত থাকার পর অবশেষে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো সেই তথ্য।
এতদিন পর্যন্ত ভারতের ডায়াবেটিসের আধুনিক চিকিৎসার জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল ডাঃ মোহনের বাবা অধ্যাপক বিশ্বনাথনকে। কিন্তু আসল তথ্য সামনে আসায় তিনি বাঙালিদের হয়েই সমর্থন জানিয়েছেন। তথ্যের ভিত্তিতে এটাও জানা গেছে যে বাগবাজারের বাড়িতেই ছিল ডাঃ জেপি বসুর চেম্বার-ল্যাবরেটরি৷ সেখানে উত্তমকুমার তাঁর কাছে চিকিৎসা করাতে আসতেন৷ এমনকি মেয়ে মুনমুন সেনকে নিয়ে সুচিত্রা সেনও এসেছিলেন৷
চলতি বছরের আগস্ট মাসে দেশের তাবড় তাবড় ডায়াবেটিস চিকিৎসকদের সম্মিলিত গবেষণাপত্র প্রকাশিত না হলে এই তথ্যও বিস্তৃতির অতলগর্ভে তলিয়ে যেতো। তাঁর মৃত্যুর ৫০ বছর পর বেরিয়ে এলো প্রকৃত সত্য। ইনসুলিন আবিষ্কারের একশো বছর পর অথবা তাঁর ইনসুলিন প্রয়োগের ৯৮ বছর পর। ঘটনাটিতে চোখ রাখলে মনে পড়ে যায় ডাঃ টি সি আনন্দ কুমারের কথা। ভারতের প্রথম টেস্টটিউব বেবির জনক হিসেবে স্বীকৃতি পান ডাঃ টি সি আনন্দ কুমার। যদিও পরবর্তীকালে তিনি নিজেই প্রমাণ করেন টেস্টটিউব বেবির প্রকৃত জনক ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়। প্রথম টেস্ট টিউব বেবি দুর্গাকে আবিষ্কার করেছিলেন ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়। যে কথাও অজানা থেকে গিয়েছিল। ডাঃ টি সি আনন্দ কুমার নিজ দায়িত্ব নিয়ে ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে স্বীকৃতি দেন। ঠিক একই কাজ করলেন ভারতে ডায়াবেটিস চিকিৎসার পথিকৃৎ বলে পরিচিত চেন্নাইয়ের ডাঃ এম বিশ্বনাথনের ছেলে দিকপাল ডায়াবেটোলজিস্ট ডাঃ ভি মোহন।
বাঙালি চিকিৎসক ডাঃ জেপি বসুর এক গবেষণাপত্র তুলে ধরেছেন তিনি৷ কেবল তিনিই নন, ডাঃ রঞ্জিত উন্নিকৃষ্ণন, ডাঃ রঞ্জিতমোহন আস্থানা, ডাঃ মঙ্গেশ তিওয়াসকার-সহ দেশের ছয়জন ডায়াবেটোলজিস্ট 'জার্নাল অফ দি অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিশিয়ান অফ ইন্ডিয়া' তে এ মাসে প্রকাশ করেছেন তাঁদের গবেষণাপত্র 'ডায়াবেটিস ইন প্রি-ইনডিপেন্ডেন্স ইন্ডিয়াঃ রিডিসকভারিং এরা'। যেখানে তাঁরা এক বাক্যে জানিয়েছেন, ভারতে প্রথম কলকাতা শহরেই প্রয়োগ হয়েছিল ইনসুলিন। যা কুমুদিনী নামে এক ১২ বছরের বালিকাকে প্রয়োগ করেছিলেন ট্রপিক্যালের দিকপাল চিকিৎসক ডাঃ জেপি বসু। তাঁরই হাত ধরে প্রায় ১০০ বছর আগে বাচ্চাদের টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা হয়েছিল কলকাতায়।
স্বীকৃতিদান পর্বে ডাঃ মোহনদের সাহায্য করেছেন এসএসকেএম হাসাপাতালের অধ্যাপক স্বনামধন্য ডায়াবেটোলজিস্ট ডাঃ সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। ট্রপিক্যালে বহু সাধ্যসাধনা করে ডাঃ বসুর লেখা বই ও গবেষণাপত্রগুলি খুঁজে বের করে এই সত্য উদঘাটিত হয়েছে। যা বাংলা ও বাঙালির জন্য সত্যিই এক অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment