Header Ads

ধ্বংসের পথে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত গলসি ব্লকের চান্না আশ্রম


স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত এক দর্শনীয় স্থান হলো পূর্ব বর্ধমানের গলসির চান্না আশ্রম। দেশের স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এই আশ্রম। একসময় একে বিপ্লবীদের আঁতুড়ঘরও বলা হতো। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, অরবিন্দ ঘোষ, ভগৎ সিং, লালা লাজপত রাই, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, রাসবিহারী বসুর মতো বহু বিপ্লবীদের আনাগোনা ছিল এখানে। এই আশ্রমে বসেই স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। 


পাঞ্জাবে ও পশ্চিম ভারতে অনুশীলন সমিতির গোপন শাখা গড়ে তোলার জন্য পি.মিত্রের অনুরোধে ১৯০৬ সালে যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় পাঞ্জাব যান। সেখানে গিয়ে তিনি ডাঃ হরিচরণ মুখোপাধ্যায়, ডাঃ চারুচন্দ্র ঘোষ, সর্দার অজিত সিং, বীর বিপ্লবী ভগৎ সিং এবং ভগত সিংয়ের পিতা কিষান সিং এর সহায়তায় গড়ে তোলেন 'গদর সমিতি'। কলকাতায় ফেরার পর ১৯০৮ সালে নরেন গোস্বামীর স্বীকারোক্তিতে আলিপুর বোমা মামলায় তিনি অভিযুক্ত হন, কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হলেও অরবিন্দ ঘোষকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়৷ এই মামলায় চিত্তরঞ্জন দাশ ওকালতি করেন। 

অরবিন্দ ঘোষের অনুপস্থিতিতে বারীন ঘোষের সাথে তাঁর মতানৈক্যের কারণে  বিপ্লবী জীবনে সাময়িক ছেদ ঘটিয়ে তিনি হিমালয়ে চলে যান৷ পরে এলাহাবাদে সোহং স্বামীর সান্নিধ্য লাভের পর শ্যামাকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দীক্ষা নিয়ে তিনি পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার অন্তর্গত নিজের গ্রাম চান্নাতে খড়ি নদীর ধারে বিশাল জায়গা জুড়ে 'চান্না আশ্রম' গড়ে তোলেন।  

স্বাধীনতা আন্দোলনের সুবিধার জন্যই তৎকালীন এই নির্জন জায়গাকে চিহ্নিত করেছিলেন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে গলসি, অন্যদিকে আউশগ্রাম ও ভাতার থানার সীমানায় বসে গোপনে তিনি গদর সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এই আশ্রম আসলে কোনো ধর্মীয় আশ্রম নয়, স্বাধীনতার জন্য গোপন কার্যকলাপের গুপ্ত আস্তানা। প্রায় ২৫ বিঘা জমির ওপর তৈরি হয়েছিল একটি খড়ের চালের মাটির ঘর। যেখানে বসেই স্বাধীনতার জন্য নানান অভিযান, আন্দোলন ও কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হতো। 

চান্না আশ্রমের খড়ের চালের সেই ঘরটি এখনও আছে। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ঘরটি৷ যে-কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বাড়িটি৷ তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার  আশ্রমের রক্ষণাবেক্ষণের কথা ঘোষণা করলেও বাস্তবে তা হয়নি। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমলে কয়েক বছর আগে আশ্রমে একটি গেস্ট হাউস ও মিউজিয়াম গড়ে তোলা হলেও সেগুলো সংরক্ষণের অভাবে ধুঁকছে। তাই যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের এখনকার সদস্যরা চাইছেন সরকার নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক উদ্যোগ নিয়ে আশ্রমটি সংরক্ষণ করুক। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments