টোকিও অলিম্পিকে তীরন্দাজিতে বিচারকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এক বাঙালি
এখনও পর্যন্ত অলিম্পিকে কোনো পদক আনতে পারেনি বাঙালিরা। অনেক বাঙালি খেলোয়াড় বহুবার অলিম্পিকে অংশ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। একসময় অলিম্পিকে একমাত্র ফুটবলে মোটামুটি অবদান রেখেছিল বাঙালিরা। ১৯৪৮, ১৯৫২, ১৯৫৬ এবং ১৯৬০ পর্যন্ত মোট চারটি অলিম্পিকে ভারতের ফুটবল টিম অংশ নিয়েছিল। সেই ফুটবল টিমের মধ্যে প্রায় সকলেই বাঙালি ছিলেন। ১৯৪৮ সালে ভারতীয় অলিম্পিক ফুটবল দলে অংশগ্রহণ করেছিলেন রবি দাস, শৈলেন মান্না, দুই ভাই অনিল নন্দী ও সন্তোষ নন্দী।
১৯৫২ সালের হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন বিখ্যাত ফুটবলার শৈলেন মান্না। ১৯৫৬ সালে ভারতীয় ফুটবল দলে নেতৃত্ব দেন বিখ্যাত ফুটবলার সমর ব্যানার্জী। এছাড়াও ঐ বছর ভারতীয় ফুটবল দলে ছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার পিকে ব্যানার্জী, নিখিল নন্দী, কেষ্ট পাল, ফুটবলের যাদুকর নামে পরিচিত মহম্মদ আবদুল সালাম। ১৯৬০ সালে ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন পিকে ব্যানার্জী। এছাড়াও ঐ বছর ভারতীয় দলে ছিলেন চুনী গোস্বামী, অরুণ ঘোষ এবং শেখ আব্দুল লতিফ।
১৯৫৬ সালে অলিম্পিক ফুটবলে চতুর্থ হয়েছিল ভারত। বর্তমানে ফুটবলে চতুর্থ স্থানাধিকারীকে ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়। সেকেলে ফুটবলে চতুর্থ স্থানাধিকারীকে কোনো পদক দেওয়া হতো না। যদি তখনও অলিম্পিক ফুটবলে চতুর্থ স্থানাধিকারীকে পদক দেওয়া হতো তাহলে অলিম্পিকে পদকজয়ী বাঙালি হিসেবে সমর ব্যানার্জী, পিকে ব্যানার্জী, নিখিল নন্দী, কেষ্ট পাল ও মহম্মদ আবদুল সালাম এই পাঁচ বাঙালির নাম লেখা থাকতো অলিম্পিকে পদকজয়ীদের তালিকায়।
অলিম্পিকে বাঙালিরা কখনো স্বর্ণপদক জিততে না পারলেও অলিম্পিকে হকি খেলায় ভারতের প্রথম সোনা এসেছিল এক বাঙালির হাত ধরে। ১৯২৮ সালে আমস্টারডাম অলিম্পিকে ভারতীয় হকি দল প্রথম স্বর্ণপদক জিতেছিল। যে দলের কোচ ছিলেন বঙ্গসন্তান পঙ্কজ গুপ্ত।
২০১৬ সালে লন্ডন অলিম্পিকে বাঙালি জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার পদক জয়ের আশা জাগিয়েও ব্যর্থ হন৷ একইভাবে টোকিও অলিম্পিকে প্রণতি, সুতীর্থা, দীপিকা, অতনু ও অনির্বাণরাও পদক জয়ের আশা জাগিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। টোকিও অলিম্পিকে বাঙালির মনে রাখার মতো তেমন কিছু নেই। তবে যে খবরটি বাঙালির মনে টোকিও অলিম্পিকে শান্তি জোগাচ্ছে তা হলো এই অলিম্পিকে তীরন্দাজির বিচারক হয়েছেন এক বাঙালি। তিনি হলেন ইন্দ্রনীল দত্ত।
টোকিও অলিম্পিকে তীরন্দাজির মঞ্চ একেবারেই খালি হয়ে যায়নি। ৩৪ বছর বয়সী বঙ্গসন্তান ইন্দ্রনীল দত্ত আশা জাগিয়েছেন। টোকিও অলিম্পিকে তীরন্দাজির বিচারকদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি৷ যা বাঙালির কাছে যথেষ্ট গর্বের এক মুহূর্ত। ভারতের তথাকথিত কোনো জাতীয় মিডিয়াতে ইন্দ্রনীল দত্তকে নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো খবর হয়নি। খবরের শিরোনামের আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন তিনি। বাংলা তথা সারা দেশের তার প্রতি গর্ব হওয়া উচিৎ।
ছেলেবেলাতেই তীরন্দাজিতে তাঁর হাতে খড়ি হলেও পড়াশোনার কারণে তিনি নিয়মিত খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি৷ অলিম্পিকে তাঁর যাওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়৷ তারপরও একেবারেই হাল ছেড়ে দেননি তিনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তিতে স্নাতক হবার পর পাড়ি দেন জার্মানিতে৷ তিনি ঠিক করলেন অলিম্পিকে তীরন্দাজির বিচারক হবেন, তাই তীরন্দাজির বিচারক হওয়ার জন্য বিশেষ কোর্স করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিচারকের ভূমিকায় ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু হয় তাঁর। এর প্রায় একদশক পর স্বপ্ন সত্যি হলো তাঁর। সত্যি সত্যিই তিনি সুযোগ পেলেন অলিম্পিকে। টোকিও অলিম্পিকে তীরন্দাজির বিচারক হয়ে বাংলা ও বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করলেন তিনি৷
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment