Header Ads

অল্পের জন্য অলিম্পিকে পদক হাতছাড়া হয়েছিল যে দুই বাঙালির


১৯৫৬ সালে অলিম্পিক ফুটবলে চতুর্থ হয়েছিল ভারত। বর্তমানে অলিম্পিক ফুটবলে চতুর্থ স্থানাধিকারীকেও ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়। যদি তখনও অলিম্পিক ফুটবলে চতুর্থ স্থানাধিকারীকে পদক দেওয়া হতো তাহলে অলিম্পিকে পদকজয়ী বাঙালি হিসেবে সমর ব্যানার্জী, পিকে ব্যানার্জী, নিখিল নন্দী, কেষ্ট পাল ও মহম্মদ আবদুল সালাম এই পাঁচ বাঙালির নাম লেখা থাকতো অলিম্পিকে পদকজয়ীদের তালিকায়। এই বেদনা আজও হতাশ করে বহু বাঙালিকে। 


খেলাধূলাতে যে একেবারেই বাঙালি পিছিয়ে তা কিন্তু নয়। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বাংলার প্রতি বঞ্চনা, বাংলাকে খেলার উন্নতির জন্য উপযুক্ত অর্থ না দেওয়াও বাঙালির অলিম্পিকে পদক না জেতার অন্যতম কারণ। যদি টোকিও অলিম্পিকের দিকে চোখ রাখা যায় তাহলে দেখা যাবে অতনু দাস ও দীপিকা কুমারী জুটি একসাথে তীরন্দাজির ডাবলসে খেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাদের কথা ভারতের ক্রীড়া বোর্ড শোনেনি। এই জুটি একসাথে তীরন্দাজির ডাবলসে খেললে পদক নিশ্চিত হতো।  

প্রণতি নায়েককে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ না দেওয়া। বহু সংখ্যক বাঙালি খেলোয়াড়দের অলিম্পিকে যেতে না দেওয়া। দীপা কর্মকারের প্রতি নজর না দেওয়া প্রভৃতি কারণে অলিম্পিকে পদক জেতা থেকে এবছর বঞ্চিত হয়েছে বাঙালিরা। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে এগুলো অজুহাত ছাড়া কিছু নয়, যার যোগ্যতা আছে সেই পদক পায়। তাহলে প্রশ্ন হলো বিশ্বের যারা এক নম্বর তিরন্দাজ তারা কী পদকের যোগ্য নয়? 

১৯৪৮ থেকে ১৯৬০ সাল এই সময়কালে যদি ভারত অলিম্পিকে ফুটবল খেলতে পারে, তাহলে এখন খেলতে পারে না কেন? ভারত সরকারের অপদার্থতাই এর মূল কারণ। ১৯৬০ সালের পর  থেকে ভারতের কোনো রাষ্ট্রীয় সরকার খেলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়ার জন্যই আজ আর অলিম্পিকে ভারতকে ফুটবল খেলতে দেখা যায় না। 

থাক সেসব আলোচনা। এবার মূল কথাই আসা যাক, অলিম্পিকে অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছিল দুই বাঙালির। তাঁরা কারা? চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে বাঙালি শ্যুটার হিসেবে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জয়দীপ কর্মকার। তিনি ৫০ মিটার রাইফেল প্রোন বিভাগে অলিম্পিকে নির্বাচিত হন হরি ওম সিং এর অর্জিত কোটাতে। মূল অলিম্পিকের যোগ্যতার রাউন্ডটি ছিল অসাধারণ। ছয়টি রাউন্ডের পর জয়দীপ আটজন শ্যুটারের সাথে সম স্কোর (৫৯৫ পয়েন্ট নিয়ে) করে চতুর্থ স্থান লাভ করেন এবং ফলশ্রুতিতে শ্যুট-অফ-এ অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্যুট-অফে ৫১.৬ স্কোর করে আবার চতুর্থ স্থান লাভ করেন তিনি। ফাইনালের শেষ শট পর্যন্ত তিনি হারিয়ে যাননি। তখনও তিনি অলিম্পিক পদকের দাবিদার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে পড়তে হল তাঁকে। মাত্র ০.৯ পয়েন্টের জন্য চলে গেলেন চতুর্থ স্থানে। তবে শুধু অলিম্পিকে নয়, জয়দীপের নিখুঁত লক্ষ্যভেদ বারবার মুগ্ধ করেছে সকলকে।  

২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে বাঙালি জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিকে নামেন দীপা কর্মকার। তাঁর খেলায় মুগ্ধ ছিল গোটা বিশ্ব। একের পর এক বাঁধার প্রাচীর টপকে অলিম্পিকের ফাইনালে পৌঁছে যান তিনি। দীপাই হলো প্রথম ভারতীয় জিমন্যাস্ট, যে ৫২ বছর পর অলিম্পিক গেমসের জন্য নির্বাচিত হন। রিও অলিম্পিকে জিমনাস্টিকের শেষ পর্বে মাটিতে পা রাখতে গিয়ে টলে যান তিনি৷ মাত্র ০.১৫০ পয়েন্টের জন্য ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া হয়ে যায় তাঁর। শেষমেশ চতুর্থ স্থান অধিকার করে তাঁর খেলা শেষ হয়। দীপা চতুর্থ স্থান অধিকার করে সাফল্য অর্জন করলেও পদক জেতা সম্ভব হয়নি তাঁর। এবছর চোটের জন্য তিনি পারেননি অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করতে।

জয়দীপ কর্মকার ও দীপা কর্মকারের মতো দুই তুখোড় খেলোয়াড়দের অল্পের জন্য পদক না পাওয়ার বেদনা আজও বাঙালির মধ্যে থেকে গেছে। সেই বেদনা বাঙালি যেদিন পদক জিতবে সেইদিন পূরণ হবে। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments