প্রথম বাঙালি হিসেবে অলিম্পিকে অংশ নেন পূর্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ থেকে একশো বছর আগের কথা। সালটা ১৯২০। এই বছরই অলিম্পিকে অভিষেক হয় ভারতের। ১৯২০ সালে বেলজিয়ামে বসেছিল অলিম্পিকের আসর। সেখানে ভারতের হয়ে প্রথম বাঙালি হিসেবে অ্যাথলেটিকসে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন পূর্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। যার কথা আমরা সকলেই ভুলে গেছি। আত্মবিস্মৃতির আড়ালেই চাপা পড়ে গেছেন বাঙালি অ্যাথলিট পূর্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ১৫ ই আগস্ট তাঁর অলিম্পিকে যোগদানের ১০১ তম বর্ষপূর্তি।
পরাধীন দেশ। ঘরের ছেলেদের একটুও খেলাধূলা করার সুযোগ নেই। পোড়াদেশে বেঁচে থাকাই জটিল, তার ওপর খেলাধূলা তো বহু যোজন দূর৷ তবুও ঘরের ছেলে পূর্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেউ গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখতে পারেনি। পরাধীন দেশে জন্মেও খেলতে গেলেন সূদুর বেলজিয়ামে। মোহন বাগান ক্লাবের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন পুঁইয়াদা নামে।
দেশের হয়ে বেলজিয়াম অলিম্পিকে ভারতের হয়ে প্রথম পতাকা বহনও করেছিলেন বাঙালি অ্যাথলিট পূর্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বাংলা ও ভারতের হয়ে সরকারি ভাবে প্রথম অ্যাথলিটের মধ্যে পড়েন৷ তিনি টর্চ বেয়ার করেছিলেন ভারতের হয়ে৷ প্রথম বাঙালি অ্যাথলিট যিনি দেশের পতাকা হাতে অধিনায়কত্ব করেছিলেন অলিম্পিকের মঞ্চে৷ তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন ৪০০ মিটার ও ১০০ মিটার দৌড়ে। তখনকার সময়ে সেরা অ্যাথলিট হিসেবে নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ইতিহাসের পাতা খুললে দেখা যায় তার নাম আজও জাজ্বল্যমান।
১৯২০ সালের ২০ শে আগস্ট বেলজিয়াম অলিম্পিকে তিনি ৪০০ মিটার দৌড় ও ১০০ মিটার দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১০০ মিটার দৌড়ের দু'নম্বর হিটে অংশ নিয়ে তিনি পঞ্চম স্থান দখল করেছিলেন এবং ৪০০ মিটার দৌড়ের আট নম্বর হিটে চতুর্থ স্থান দখল করেছিলেন তিনি৷ অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু সময়কাল অনুযায়ী তাঁর সেরা পারফরম্যান্স ছিল এটা। অলিম্পিকের ইতিহাসে পূর্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা সারা বিশ্ব মনে না রাখলেও বাঙালির উচিৎ তাঁকে মনে রাখা।
মোহনবাগান ক্লাবের কাছে তাঁর অবদান বাঁধিয়ে রাখার মতো। ১৯১৬ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত ক্লাবের হয়ে তিনি নানান প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন৷ দেশের সকল ইভেন্টেই তিনি জয়ী হতেন৷ এমন একজন শক্তিশালী বাঙালি মহাপুরুষের কথা নিয়ে বেশি করে চর্চা হওয়া প্রয়োজন৷ অলিম্পিকে আরো বেশি বেশি করে বাঙালিদের যেতে হবে৷ বাঙালি প্রায় সমস্ত বিষয়ে দেশের মধ্যে এগিয়ে থাকলেও বাঙালির অলিম্পিকে পদক জেতার সৌভাগ্য আজও হয়নি৷ এটাই আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment