Header Ads

মাদুরশিল্পের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই মহিলা মাদুরশিল্পী


মাদুরের জন্য বিখ্যাত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং গ্রাম। এই শিল্পের জন্য এবার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেতে চলেছেন দুই প্রথিতযশা শিল্পী শ্রীমতী গৌরী রাণি জানা এবং শ্রীমতী গৌরীবালা দাস। তাঁদের তৈরি মাদুরের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন মূর্তির অবয়ব। কোনোটা পৌরাণিক, কোনোটা আবার বিশেষ প্রতিকৃতি। মাদুরশিল্পের পুনরুজ্জীবন দান এবং এই ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের বিকাশে বিশেষ অবদানের কারণে তাঁরা এই পুরস্কারটি পাচ্ছেন।


বাংলার এক অন্যতম নিদর্শন হলো মাদুর শিল্প। বাংলার প্রথাগত ও ঐতিহ্যবাহী কার্পেট হলো মাদুর। যা তৈরি হয় সাধারণত মাদুরকাঠি নামক একপ্রকার প্রাকৃতিক তন্তু থেকে। মাদুরকাঠি একপ্রকার রাইজোম নির্ভর উদ্ভিদ। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম সাইপ্রাস টেজিটাম। উদ্ভিদটি জন্মায় পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উর্বর পলিমাটিতে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে জিআই রেজিস্ট্রি কর্তৃক পশ্চিমবঙ্গের মাদুরকাঠিতে জিআই স্বীকৃতি  প্রদান করা হয়।   

মাদুর কাঠির চাষ করেন পুরুষ আর মাদুর বোনেন মহিলারা। এখানেই দুটি মনন জুড়ে তৈরি হয় একটি রঙিন শিল্প। মাদুর শিল্পের সমাদর সর্বত্র। মাদুরের বুনন দুই রকমের - একহারা ও দোহারা। একহারার দুটি কাঠি সুতোর উপর নীচে পরানো হয় পর্যায়ক্রমে৷ আর দোহারার কাঠি দুটি দড়ির ওপর নীচে পরানো হয়। কাপড় দিয়ে ছোটো ছোটো দু-তিনটে মাদুর জোড়া লাগানো হয় অনেক সময়। 

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলেছে মাদুর তৈরির চিরাচরিত প্রথাও৷ মাদুরের পাশাপাশি আসনের ব্যবহার ছিল আগে থেকেই৷ এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ল্যাপটপ কভার, চায়ের ট্রে, কাপবোর্ড, ব্যাগ ইত্যাদি আধুনিক সব সরঞ্জাম। সমবায় ব্যবস্থার মাধ্যমে মহিলারা গড়ে তুলেছেন নিজেদের দল৷ গৌরী রাণি জানা এবং গৌরীবালা দাসেরও আছে এমনই দুটি কারখানা। দুজনেই পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও তাঁদের কারখানা দুটি রয়েছে সবং শহরে৷ একেবারে ছোটো অবস্থা থেকে শুরু করে আজ সেখানে ৬০ জনের ওপর কর্মচারী কাজ করেন।  

মাদুরের মধ্যে মসলন্দ মাদুরের সুদৃশ্য কারুকাজ একসময় বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছিল। শ্রীমতী গৌরী রাণি জানা ও শ্রীমতী গৌরীবালা দাস দুজনেই উচ্চমানের মসলন্দ মাদুরের প্রথিতযশা শিল্পী। বিগত দুই বছর করোনা অতিমারীর কারণে বিপুল ক্ষতি হয় এই শিল্পের। বাজার দোকান বন্ধ থাকায় এই শিল্প ক্রমশ ধুঁকছে৷  পরিবর্তিত পরিস্থিতির মোকাবিলায় কেউ কেউ অনলাইনে তাদের শিল্পসামগ্রী বিক্রয় করতে শুরু করেছেন। বর্তমানে উন্নতমানের মাদুর বোনা কমে এলেও তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে বিগত কয়েক বছরে এই শিল্প পুনরুজ্জীবন লাভ করেছে। নতুন করে বাংলার মাদুর তার লুপ্ত গৌরব পুনরুদ্ধারে আগ্রহী। বাংলার মাদুর পুনরায় ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছে তার বাজার। ভারতের অন্যান্য প্রান্তেও বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ছে। রাষ্ট্রীয় স্তরে শ্রীমতী গোরী রাণি জানা ও শ্রীমতী গৌরীবালা দাসের এই সম্মান লাভ তারই প্রতিফলন বলে মনে করছে বাংলার শিল্প মহল।

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments