Header Ads

বিশ্বখ্যাত চিত্রগ্রাহক সুব্রত মিত্রের স্মরণে বসলো স্মৃতিফলক, গড়ে উঠবে সংগ্রহশালাও


বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি সিনেমাটোগ্রাফার সুব্রত মিত্র। যিনি কাজ করেছেন সত্যজিৎ রায়ের বেশ কিছু ছবিতে। তাঁর মতো সিনেমাটোগ্রাফার ভারতে খুবই দুর্লভ। তাঁর হাতে ছিল অনন্য শিল্পের ছোঁয়া। ছবির প্রতিটি দৃশ্য নির্ধারণ অত্যন্ত যত্ন সহকারে ক্যামেরাতে বন্দী করতেন তিনি। এক একটা দৃশ্য নিখুঁত ভাবে তিনি তৈরি করতেন। শোনা যায় চায়ের লিকারের রঙ পরিবর্তনের জন্যও তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতেন। ছবির সিনেমাটোগ্রাফি করার সময় তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্যের সঙ্গে কাজ করতেন। 


সুব্রত মিত্রের বয়স তখন সবে ২১ বছর। বিশ্ববরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায় তখন 'পথের পাঁচালি' ছবির কাজ শুরু করেছেন। ছবির বাজেটও অল্প। এদিকে সুব্রত মিত্র সিনেমাতে কাজের সুযোগসন্ধান করতে ব্যস্ত। মুভি ক্যামেরা নিয়েও খুব একটা নাড়াচাড়া করেন নি তিনি। এই ক্যামেরাতে তাঁর কাজ করবারও অভিজ্ঞতা খুব একটা তখন ছিলনা। শুধুমাত্র স্টিল ক্যামেরা হাতেই তিনি শুরু করলেন তাঁর প্রথম কাজ। ১৯৫২ সালে সত্যজিৎ রায়ের 'পথের পাঁচালি' চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক হিসেবে তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা হয়। এরপর সত্যজিৎ রায়ের 'নায়ক' থেকে 'পরশপাথর', 'জলসাঘর', 'মহানগর', 'চারুলতা', 'অপুর সংসার', 'অপরাজিত', 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' ও 'দেবী'র মতো প্রায় দশটি ছবিতে তিনি চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন। 

উপমহাদেশের ছবিতে তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন "বাউন্স লাইটিং"। 'অপরাজিত' ছবিতে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল এই প্রযুক্তির। কলকাতার বুকে বসেই এই অত্যাধুনিক লাইটিং প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছিলেন তিনি। ৭০, শরৎ বোস রোডে যে লাল ইটের একটি মান্ধাতার আমলের বাড়ি লক্ষ্য করা যায়। এই বাড়িতেই তিনি শৈশব থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত কাটিয়েছেন। এখানে বসেই এই প্রযুক্তির আবিষ্কার করেন তিনি৷ এ বাড়িকে ঘিরে বাংলা চলচিত্রের অনেক রঙিন স্মৃতি জড়িয়ে আছে। 

গত জানুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন চিত্রগ্রাহক সুব্রত মিত্রের বাসভবনকে 'হেরিটেজ' তকমা দেয়। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এবার তাঁর বাড়ির সামনে স্থাপিত হলো একটি স্মৃতিফলক। কেবল স্মৃতিফলকই নয়, পরবর্তীকালে এই ধরণের একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের স্মৃতির  উদ্দেশ্যে সুব্রত মিত্রের বাড়িতে একটি প্রদর্শনশালারও পরিকল্পনা করেছে হেরিটেজ কমিশন৷   

সুব্রত মিত্রের ক্যামেরা, সিনেমাটোগ্রাফির নানা স্মারক ও আঁকা ছবি এবং অন্যান্য নানান উপকরণ সহযোগে একটি পূর্ণাঙ্গ সংগ্রহশালা বানাতে চলেছে কমিশন। সেই উদ্দেশ্য কমিশন নির্মিত একটি কমিটিতে রয়েছেন চলচ্চিত্র জগতের বহু গুণীজন, সুব্রত মিত্রের পরিবার, আত্মীয় ও পরিচিতরা। কিছুদিনের মধ্যেই  শুরু হতে চলেছে সেই কর্মযজ্ঞ। 

তবে হেরিটেজ বাড়ির পুরাতন চেহারা ফিরিয়ে আনতে এখনও খানিকটা সময় অপেক্ষমান বলে জানাচ্ছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। একইসঙ্গে আগামীতে সুব্রত মিত্রের বাসভবনের রক্ষণাবেক্ষণের সমস্ত দায়িত্ব নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কমিশন৷  

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


No comments