অনলাইন শিশুশিক্ষার পথপ্রদর্শক হয়ে গোটা দেশকে পথ দেখাচ্ছেন তমাল ও তিমির মুখোপাধ্যায়
করোনার আবহে লকডাউনের সময় অনলাইনে বেড়েছে শিক্ষার গুরুত্ব। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার জন্য অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো সময় ওপেন বুক এক্সামও নেওয়া হচ্ছে। এই অনলাইনে শিক্ষার গুরুত্ব মূলত শিশুশিক্ষার গুরুত্বকে আরো বেশি বৃদ্ধি করার দায়িত্ব নিয়েছে এক বাঙালি পরিবার। তাঁদের তৈরি স্টার্টআপ সংস্থা 'নালন্দা লার্নিং সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড' অনলাইনে শিশুশিক্ষার ব্যবসায় দেশের রোল মডেল হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে কলকাতার অন্যতম স্টার্ট-আপ সংস্থা হয়ে উঠেছে 'নালন্দা লার্নিং সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড'। এই সংস্থার মালিক হলেন তমাল মুখোপাধ্যায় ও তিমির মুখোপাধ্যায়। এনারা দুজন যমজ ভাই। তাঁরা এই সংস্থাটি তৈরি করার আগে বিভিন্ন বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। এর আগে ওনারা দুজনে একই কোম্পানিতে চাকরি করেন। তমাল মুখোপাধ্যায় ছিলেন ইউটিআই-এর আঞ্চলিক প্রধান আর তিমির মুখোপাধ্যায় ছিলেন ইউটিআই-এর কলকাতা দফতরের প্রধান।
অনেকের মুখেই আজকাল শোনা যায়, পশ্চিমবঙ্গে বসে নাকি বড় কিছু করা যায় না। কিন্তু তমাল মুখোপাধ্যায় ও তিমির মুখোপাধ্যায় দুই ভাই প্রমাণ করেছেন 'জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো'। তাঁরা কলকাতাতে বসেই হয়ে উঠেছেন শিশুদের অনলাইন শিক্ষার পথিকৃৎ। তিন বছর থেকে ছয় বছর বয়সের শিশুদের শিক্ষার জন্য তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ইতিমধ্যেই গুটিকয়েক সংস্থা এই বাজারটি ধরতে চাইছে। যদিও ভাবনার দিক দিয়ে তাঁরা বহুগুণ এগিয়ে আছেন। মাত্র এক বছরের কম সময়েই তাঁদের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার দুশো জনের মতো।
যেভাবে তাঁদের এই ভাবনাটি আসে তা হলো, তমাল মুখোপাধ্যায় ও তিমির মুখোপাধ্যায় ২০০৬-০৭ নাগাদ রিষড়ার কিডজি-র একটা স্কুলের ফ্র্যাঞ্চাইজি নেন। যা দেখাশোনা করতেন দুজনের স্ত্রী। সেখানে থেকেই হঠাৎ করে তাঁদের ভাবনাটি মাথায় আসে। তাঁরা দেখেন প্রি-প্রাইমারি প্লে গ্রুপ স্কুলের যে সমস্ত ব্র্যান্ড রয়েছে, সেগুলি প্রায় সবই মুম্বাই ও দিল্লির। যে স্কুলগুলিতে পড়াতে গেলে খরচের অঙ্কটা অত্যধিক। তাই স্বল্প খরচে তাঁরা প্রি-প্রাইমারি প্লে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেন। আর এই ক্ষেত্রটি যেহেতু নতুন সেহেতু ব্যবসা দারুণভাবে বৃদ্ধি পাবে। সেই ধারণা থেকেই তাঁরা মফঃস্বল ও জেলা শহরগুলিকে মূল অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা চিন্তা করেন।
২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে নিজেদের তৈরি শিক্ষার উপকরণ সাজিয়ে ভিন্ন ভাবনায় তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা মিলিয়ে ৪০০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে তৈরি করে ফেলেন ৮৩ টি স্কুল। যেখানে ছাত্রছাত্রীদের সব মিলিয়ে বার্ষিক মাথাপিছু খরচ ২০ হাজার টাকা। তাঁদের সমস্ত স্কুল মিলিয়ে ৫০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৫০০-র মতো অ্যাটেড্যান্ট রয়েছেন। বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই তাঁরা পাঠদান করেন। গত বছর লকডাউনে তাঁদের সংস্থার সমস্ত স্কুলগুলো বন্ধ হতে বসেছিল কিন্তু এক ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় নতুন করে ঘুরে দাঁড়ায় স্কুলগুলো। লকডাউনের বাজারেও গত বছর ১২ কোটি টাকা আয় করে সংস্থাটি। এ বছর সংস্থার আয় আরো ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ সূত্র থেকে জানা গেছে, সামনের বছরই পশ্চিমবঙ্গে আরো ২৫ টি স্কুল গড়ে তুলবে 'নালন্দা লার্নিং সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড'। এছাড়াও ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশাতে ১০ টি স্কুল তৈরি হবে। এমনকি দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তর ভারতে সংস্থাটি ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলে ব্যবসা ছড়িয়ে দেবে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment