সত্যজিৎ রায়ের 'খেরোর খাতা' এখন মুঠোফোনে
সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র তৈরির চিন্তাভাবনা আর পাঁচটা পরিচালকদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল৷ দৃশ্য নির্ধারণের পূর্বেই তিনি খাতায় এঁকে ফেলতেন দৃশ্যটি৷ ফ্রেম টু ফ্রেম ছবির প্রতিটি দৃশ্য তিনি রঙ-পেন্সিল দিয়ে অঙ্কিত করতেন। এমন প্রতিভা আজও খুবই বিরল যারা ছবির দৃশ্যকে খাতাতে আঁকতে পারেন৷ সেকেলে অনেকেই ছবি বানাতেন কিন্তু সত্যজিৎ রায় ছিলেন একজনই৷
কিংবদন্তী কালজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের গচ্ছিত অমূল্য সম্পদ হলো 'খেরোর খাতা'। তিনি প্রত্যেকটি ছবি নির্মাণের সময় একটি খেরোর খাতায় সবটা লিখতেন৷ লাল খেরোর কাপড় দিয়ে বাঁধানো নোটবইটি সত্যজিৎ রায় নিজের চলচ্চিত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করতেন। পরবর্তীকালে সেটি পরিণত হয়েছিল সিনেমার খাতায়। একেকটি সিনেমার জন্য তিনি রাখতেন এক একটি খেরোর খাতা। যা চলচ্চিত্র তৈরির অনন্য দলিল। এবার সেই খেরোর খাতা বন্দী হতে চলেছে মুঠোফোনে।
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত কালজয়ী ছবি 'গুপি গাইন বাঘা বাইন'-এর দুটি খেরোর খাতা এবার পাওয়া যাবে হাতের দোড়গড়ায়। সম্প্রতি exploreray.org নামের ওয়েবসাইটে এই দুটি খাতা ফিল্ম-বুক হিসেবে প্রকাশিত হলো। সত্যজিৎ রায় প্রতিটি ছবির আগেই পূর্বপরিকল্পনামাফিক ছবির যথাযথ বিবরণ খেরোর খাতায় লিপিবদ্ধ করতেন৷ আঁকা আর লেখার সমাহারে এই খাতাতে তোলা থাকতো তাঁর নিজস্ব ভাবনাসমূহ৷ ছবির কোন চরিত্র কোন পোশাক পরবে, কোথা থেকে দৃশ্য নির্ধারণ করা হবে, সংলাপ কী হবে, কোন জায়গাতে সঙ্গীত ব্যবহার করা হবে- এই সমস্ত বিবরণ রয়েছে খেরোর খাতায়।
খেরোর খাতা দুটির প্রথম পর্বে রয়েছে ছবি তৈরির সমস্ত তথ্য। আর দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে ৯০ পাতার নাচের বর্ণনা। এছাড়াও আছে সম্পাদনা, নেপথ্য সঙ্গীত, সাউন্ড ও স্পেশাল এফেক্ট সহ একাধিক বিষয়। এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন প্রযুক্তিবিদ্যার সংস্কৃতিমনস্ক দুই তরুণ শিক্ষার্থী অয়নাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুব্রত চক্রবর্তী। দু'জনেই পাঠ্যরত 'দ্য চ্যাটার্জি গ্রুপ'-এর 'সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি'তে। এছাড়াও সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ রায়, মৃণাল সেনের পুত্র কুণাল সেন, পূর্ণিমা দত্ত এবং 'সেন্টার ফর নিউ মিডিয়া' নামক একটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণ হয়েছে।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment