চুঁচুড়ার 'রবিনহুড' নামে পরিচিতি লাভ করছেন সমাজসেবী সন্দীপ রুদ্র
হুগলি জেলার সদর শহর চুঁচুড়ার এক যুবক সন্দীপ রুদ্র। যিনি এই শহরের একজন নামকরা সমাজসেবী। লোকেরা তাঁর কাজের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছেন শহরের 'রবিনহুড'। তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ডকে বিশেষ ভাবে কুর্নিশ জানাচ্ছেন শহরবাসীরা। প্রশাসনের উচ্চস্তরের ব্যক্তিত্ব থেকে শহরের বুদ্ধিজীবি সকলেই মুগ্ধ তাঁর মানবিক উদ্যোগে।
অতিমারির ফলে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব৷ কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের অত্যাচারে বিপন্ন জনজীবন। প্রতিদিন বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ মৃত্যুমিছিল যেন কিছুতেই থামছে না। ঠিক এই মুহূর্তে সন্দীপ রুদ্র মানুষের বিপদে এগিয়ে এসেছেন। বাড়িতে তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন। এই জটিল সময়ে একাকী প্রাণপণে কোভিড মুক্তি সংগ্রামী হয়ে লড়াই করছেন। বয়স ৩৬ এর এই যুবক মৃত্যুভয় পায়ের ভৃত্য করে সারা চুঁচুড়া শহর ও পাশ্ববর্তী শহরের বিপদগ্রস্ত মানুষের দুর্দিনে ছায়াবৃক্ষের মতো তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
গতবছর লকডাউনে তিনি তাঁর একটা সামান্য সাইকেলে করে কখনো চুঁচুড়া থেকে ব্যান্ডেল আবার ব্যান্ডেল থেকে হুগলি কিংবা হুগলি থেকে চন্দননগর অথবা মানুকুণ্ডু ছুটেছেন৷ কারণ এই অতিমারিতে যখনই কারোর ওষুধ, অক্সিজেন ও খাবারের দরকার পড়েছে, তখনই তিনি আর্তের সেবা করতে তার কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। অসহায় বৃদ্ধ থেকে কোভিড আক্রান্ত মানুষ, কারোর কাছেই তাঁর যেন যেতে বাঁধা বা আপত্তি নেই। বেশ অল্প সময়েই তিনি শহরের একজন পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন।
কোভিডে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি একাই শহরের মোড়ে মোড়ে মাস্ক পরার আবেদনে সোচ্চার হয়েছেন বারবার। মুমূর্ষু ও বিপদগ্রস্ত মানুষের বাড়িতে এক ফোনে পৌঁছে যাবে ওষুধ। যার জন্য তিনি নিজের মোবাইল নাম্বার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ইয়াস সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গত মানুষদের জন্যও তিনি ছুটে গিয়েছেন৷ যে-কোনো মুহূর্তে কোনো জরুরি অবস্থায় হোক না কেন তিনি ভোলেন না মানুষের বিপদের দিনে তাদের সাহায্যপ্রার্থী হতে৷ গত সপ্তাহে তিনি মানুষের জন্য পালস অক্সিমিটার জোগাড় করেছেন অনুদান হিসেবে, যাতে তিনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মানুষের টেম্পারেচার চেক করতে পারেন৷
বছরখানেক হলো তিনি 'জনস্বার্থ' নামে সমাজ কল্যাণমূলক সংগঠন গড়ে তুলেছেন৷ যার ট্যাগলাইন 'বিভেদ নয়, বিপদে আছি'র মধ্য দিয়ে বর্তমানে ভয় নামক ব্যাধিকে তিনি সরিয়ে দিতে চেয়েছেন। তিনি মনে করেন "মানুষের জন্য কাজ করতে হলে নেতা-মন্ত্রী লাগে না, ইচ্ছে থাকলেই হয়।" তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে চুঁচুড়ার কোনো মানুষকে তিনি অনাহারে থাকতে দেবেন না। ৩০০ টাকা পকেটে নিয়েই তিনি অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে শুরু করেন। পরে দেখা যায় মানুষের পাশে থাকতে গিয়ে তিনি ৮২,০০০ টাকা খরচ করেছেন। অসহায় মানুষের পাশে নিঃশব্দে তাঁকে দাঁড়াতে দেখে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বহু মানুষ নিঃশব্দে তাঁকে সাহায্যও করছেন। তাঁর মহৎ কাজের জন্য চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট, জেলা সাংবাদিক সংগঠন ও একটি সমাজকল্যাণ সংস্থা তাঁকে সম্মান জানিয়েছে।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment