প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিরল আন্তর্জাতিক সম্মান বঙ্গতনয়ার, যে সম্মান পেয়েছেন নোবেল প্রাপকরাও
বাইরে রোদে ঘোরাফেরা করার জন্য অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করে থাকেন। বাজারে যে ধরণের সানস্ক্রিন কিনতে পাওয়া যায় তা ঠিকমতো কাজ করেনা। যার ফলে পথচলতি মানুষদের ত্বকের সমস্যায় পড়তে হয়। যার প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন জৈব অণুর সঙ্গে সূর্যরশ্মি বা আলোর সম্পর্কের ধারণাটাই এখনও পরিস্কার নয়৷ ঠিক এই বিষয়কেই টার্গেট করে যুগান্তকারী গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রীরামপুর শহরের বাসিন্দা দেবশ্রী ঘোষ। যে গবেষণার জন্য তিনি বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক মঞ্চে অর্জন করলেন বড় স্বীকৃতি।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব কোয়ান্টাম মলিকিউলার সায়েন্সের দেওয়া বিজ্ঞান সম্মান পেলেন দেবশ্রী ঘোষ। এই পুরস্কারের ৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় হিসেবে এ সম্মান পেলেন তিনি৷ যে পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় রয়েছেন বহু নোবেলবিজয়ীর নাম। দেবশ্রী ঘোষ বর্তমানে কলকাতার ঐতিহ্যময় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সের স্কুল অফ কেমিক্যাল সায়েন্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।
প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক এবং ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স থেকে স্নাতকোত্তরের পর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা পাড়ি দেন৷ সেখানকার কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি এবং সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট-ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন ২০১২ সালে। প্রথমে পুনেতে সিএসআইআর-এর পরীক্ষাগারে কাজে যোগ দেন। এরপর ২০১৭ সাল থেকে তিনি যুক্ত আছেন যাদবপুরের আইএসিএস-এর সঙ্গে। যাদবপুরের মাটিতেই তিনি শুরু করেন তাঁর জৈব অণু বিষয়ক গবেষণা।
আলো ও বিভিন্ন পদার্থের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে দেবশ্রী ঘোষের আগ্রহ ছিল শৈশবকাল থেকেই। যা কার্যকর করতে তিনি মূলত জৈব অণুগুলিকে বেছে নিয়েছেন। আলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর সেগুলি মানবদেহে কতটা বদলে যায় তা বোঝার চেষ্টা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে আগামী দিনে বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়া ও তার ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি বোঝা সহজতর হয়৷ তিনি ত্বকের মেলানিন নিয়ে কাজ করছেন। সবটাই তিনি করছেন তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে। সূর্যের রশ্মি মানুষের শরীরে প্রবেশ করার পর কী ধরণের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটায়, সে-বিষয়ে একটি মডেল তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সাথে তিনি গবেষণার কাজে লাগিয়েছেন কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে। কাজটা একাকী সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়, তাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অন্যান্য বিজ্ঞানীদেরও যুক্ত করতে হবে বলে মনে করছেন তাঁর সহকর্মীরা। এই গবেষণাটি সফল হলে বিজ্ঞানের জগতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। সেদিকে তাকিয়েই এখন গোটা বিশ্ব।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment