৩৩ বছর ধরে নিজ উদ্যোগে রাস্তা ও নর্দমা পরিস্কার করছেন রায়গঞ্জের রামানন্দ দাস
নিজ উদ্যোগে ৩৩ বছর ধরে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া বা নালা নর্দমার নোংরা তুলে জল চলাচল সচল রাখার কাজ করছেন রায়গঞ্জ শহরের বাসিন্দা রামানন্দ দাস। আমাদের বাড়ির চারপাশ, রাস্তাঘাট ভালো রাখার দায়িত্ব কিন্তু প্রতিটি নাগরিকের। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্যে যে সততা আছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন তিনি৷ শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঠিকমতো রাস্তা পরিস্কার করা হয়না, নর্দমাও পরিস্কার করা হয়না৷ যার ফলে যেমন দুর্গন্ধ ছড়ায় তেমনই মশার উপদ্রবে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে৷ এই সবকিছু কথা চিন্তা করেই তিনি একাজ করে থাকেন৷
রামানন্দ দাসের আদিবাড়ি ছিল আসামের উত্তর লখিমপুরে। সামাজিক সুরক্ষার তাগিদে ১৯৭২ সালে তিনি আসাম ত্যাগ করে বাংলার এক ছোট্ট মফস্বল শহর রায়গঞ্জে চলে আসেন। তিনি মনে করেন শহরের দিনকাল বদলে যাচ্ছে দিন দিন, শহর হিসেবে রায়গঞ্জ এখন বেশ পরিচ্ছন্ন। তাই সেই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্যই তিনি রাস্তা ও নর্দমা পরিস্কার রাখার কাজ করে আসছেন ৩৩ বছর ধরে।
তিনি দেখেছেন রায়গঞ্জের বিবেকানন্দ মোড় এলাকায় বৃষ্টি হলেই প্রচণ্ড জল জমতে থাকে। তিনি যে দোকান ঘরে থাকেন, সেখানেও জমা জল ঢুকে নাজেহাল অবস্থা তৈরি হতে থাকে। এমতাবস্থায় তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে ড্রেনগুলো অচলাবস্থায় রয়েছে। ড্রেনগুলো পরিস্কার করতে পারলেই আর জল জমবে না। তাই কোদাল, বেলচা কাঁধে নিয়ে তিনি ড্রেন সাফ করতে বেরিয়ে পড়েন৷ প্রথমদিকে তাঁকে কিছুটা একাজ করতে লজ্জা হতো কিন্তু পরবর্তীকালে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়৷
জীবনে তিনি বড়োই একা। কাছের মানুষ বলতে তাঁর তেমন কেউ নেই। বিবেকানন্দ মোড়ের এক দোকানঘরে একাই বসবাস করেন তিনি। তিনি অবিবাহিত। তিনি একবেলা খাবার খেয়ে আরেক বেলা কোনোক্রমে কাটিয়ে দেন। আরেক বেলাতে খাবার জুটলে তিনি খান আর না জুটলে অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটিয়ে দেন। গতবছর লকডাউনে দীর্ঘদিন ধরে হোটেল বন্ধ থাকার কারণে পেট চলেনি তাঁর। বহু কষ্টে তিনি দিন কাটিয়েছেন। তাঁর বয়স বর্তমানে ৭১। শরীরে রান্না করার মতো শক্তিটুকুও তাঁর আর নেই। ফলে নিদারুণ কষ্টে দিনরাত্রি পার করছেন তিনি।
তিনি আগে রায়গঞ্জ শ্মশান, হাসপাতাল রোড থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত ড্রেন পরিস্কার করার কাজ করতেন। এখন অনেক জায়গার ড্রেনের ওপর স্ল্যাব বা পাটাতন বসানোর ফলে ড্রেন পরিস্কার যথেষ্ট অসুবিধাজনক হয়ে গেছে।
বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়ায় তিনি খুব বেশি জায়গা আর পরিস্কার করতে পারেন না। তিনি এখন কেবল বিবেকানন্দ মোড়েই সাফাইয়ের কাজ করেন। একটা সময় ড্রেন থেকে ট্রাক্টর নোংরা তুলতেন তিনি। ভোর আড়াইটা থেকে তিনি কাজ শুরু করে দিতেন। ছয় থেকে সাতঘন্টা ঘুরে বেড়িয়ে তিনি এই কাজ করতেন। বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত কাজকর্ম করার ক্ষমতা আর তাঁর নেই বললেই চলে। তাঁর আক্ষেপ, এখন যারা ড্রেন পরিস্কার করে, তারা জলে ভেসে থাকা আবর্জনা তুলে নেয়, তলার নোংরা তোলে না। তাই তিনি তলার নোংরা আবর্জনা তুলে নেন। দোকান ঘরে বসবাস করার জন্য তাঁর বাথরুম ও স্নানের জায়গা নেই। তাঁর ছোট্ট দোকানে আজকাল একেবারেই রোজগার হয়না। পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় মল তৈরি হওয়ার জন্য তাঁর দোকানে কেউ আসেন না।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
তথ্যসূত্র- নিউজ বৃত্তান্ত
Post a Comment