আজও ১ টাকায় তেলেভাজা বিক্রি করে সফলভাবে ব্যবসা করছেন জামালপুরের হিমাংশু সেন
বাঙালি ব্যবসা করো বলে গেছেন মহান বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। তাঁর এই কথাকে বাস্তবয়াতি করছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর গ্রামের হিমাংশু সেন। আজকের দিন দাঁড়িয়ে যখন জ্বালানি তেলের (পেট্রোল ডিজেল) দাম ১০০ টাকা ঠিক তখন অবলীলায় তিনি বাঙালির জন্য ১ টাকায় চপ, বেগুনি, সিঙ্গাড়া, ফুলুরী ইত্যাদি কে পুঁজি করে ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন।
আজ যখন হাতে-কলমে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের মুখে চপ ব্যবসা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে বিদ্রুপ করতে শোনা যায়, ঠিক সেই সময় ছোট শিল্পের মাধ্যমে পুঁজি বাড়িয়ে দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা প্রতিদিন লাভ করছেন হিমাংশু বাবু।
এর মধ্যে দিয়ে হিমাংশু তার সংসার ভরনপোষণ করছেন।পুরানো প্রবাদ আছে কোন কাজ ছোট নয়। যে কথার কিন্তু সঠিক ভাবে বাস্তব রূপ হিমাংশু সেনের মতো ব্যক্তিরাই দিয়ে থাকেন।
বর্তমানে চারিদিকে যেখানে শুধু ভেজাল আর ভেজাল, সেই যুগেও বেঁচে রয়েছেন হিমাংশু সেনের মতো মানুষ গুলো। যারা শুধু নিজেদের স্বার্থের কথাই না, ভাবেন গরীব নিম্নবিত্ত মানুষদের কথাও।
হিমাংশু বাবু আরো জানান একসময় আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন না হিমাংশু বাবুর পরিবার। তখন তাদের ঠিক মতো খাবার জুটত না। হিমাংশু সেনের বাবা বিশ্বনাথ সেন অনেকদিন আগে একটা তেলে ভাজার দোকান খুলে ছিলেন। তখন মাত্র দাম ছিল ৮০ পয়সা।
৩০ বছরে মাত্র ২০ পয়সা দাম বাড়িয়েছেন হিমাংশু। নিয়মিত দুপুর ৩ টে থেকে রাত ৯ টা অবধি তার দোকান খোলা থাকে। ভীড়ও হয় প্রচুর। তাকে এই কাজে সাহায্য করেন তার স্ত্রী বন্দনা সেন, ছেলে কাশীনাথ সেন এবং পুত্রবধু শম্পা সেনও।
এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে 'হিমাংশুবাবুর চপের দোকান'। নাম শুনেই আশেপাশের এলাকা থেকে অনেকেই এসে দেখে যাচ্ছেন। সাথে টেস্ট করে যাচ্ছেন তাঁর এই চপ। চপের সাথে সাথে বিক্রি হচ্ছে রসগোল্লা, ল্যাংচা, মাখা সন্দেশ এবং ঘুগনি। এই ঘুগনির দাম মাত্র ২ টাকা।
হিমাংশু বাবু আরো জানান "এইভাবে আমি মেয়ের বিয়েও দিয়েছি, দোতলা বাড়িও বানিয়েছি।" হিমাংশু বাবুর মতো মানুষজন শুধু নিজেদের স্বার্থের কথাই না, ভাবেন গরীব নিম্নবিত্ত মানুষের কথাও। মানবিকতা এ রকমই হওয়া উচিত প্রত্যেকের। সকলের মধ্যে যদি এরূপ মানবিকতা থাকত তাহলে আজ হয়তো সমাজে গরিব শ্রেণী, নিম্নবিত্ত শ্রেণী বলে কিছু হতো না। বরাবরই যে ব্যক্তির ধন-সম্পদ প্রচুর সেই ব্যক্তি আরো লাভবান হচ্ছেন এবং গরীবেরা চরম দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে যাচ্ছেন। কথাতেই আছে, "ইচ্ছা থাকলে এবং মনের জোর থাকলে সব সম্ভব।" হিমাংশু সেনের মতো মানুষ গুলোই এই কথাটি বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছেন আজও। বাজারে বেরিয়ে যাদের দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয় ক্রমাগত আপ্লুত তারাও।
প্রতিবেদন- কৌশিক চ্যাটার্জি
Post a Comment