ভারতের বাইরে প্রথম বাংলা ক্রীড়া ধারাবিবরণী
তোলপাড় হচ্ছে নেট দুনিয়া, ভারতীয় ফুটবলের এক নক্ষত্র এবং বাংলার গর্ব রহিম নবীর ধারাভাষ্য নিয়ে, কারোর কারোর মতে যা নাকি মোটেও ভালো হয়নি; আর কারোর কারোর বক্তব্য "একজনের ভাষা এবং উচ্চারণের আঞ্চলিকতার কারণে শহুরে এলিটরা তাঁকে এভাবে হেনস্থা করতে পারেন না।"
রহিম নবী নিজেও সপাটে উত্তর দিয়েছেন - "আমি বাংলা ভাষাতেই কথা বলেছি, আমার কথায় গ্রাম্য টান এখনো রয়েছে, সেই জন্য অবশ্য আমি একফোঁটাও লজ্জিত নই, বরং গর্বিত, অনেকে আমার উচ্চারণ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন, সেটা তাঁরা করতেই পারেন, কিন্তু তাঁদের মনে রাখা উচিত, আমি তেমন উচ্চশিক্ষা না পেয়েও দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলেছি, সেই জন্যই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, একাধিক মানুষ আমার ফুটবল বোধ নিয়েও প্রশ্ন করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দেশের সর্বোচ্চ স্তরে ফুটবলটা কিন্তু আমি খেলেছি।" ইউরো কাপে তাঁর ধারাভাষ্যের পর নেট দুনিয়ায় তার বিরুদ্ধে ট্রোলিং এর জবাবে এ কথাই বলেন তিনি।
তাঁর পক্ষের এবং বিপক্ষের সকলেরই একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার যে, সেখানে তিনি ধারাভাষ্যকার হিসেবে গিয়েছিলেন, নাকি বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তব্য পেশ করাই ছিল তাঁর কাজ। যদি বিশেষজ্ঞ হিসেবে গিয়ে থাকেন তাহলে তাঁর ভাষা নয়, তাঁর ফুটবল স্কিলকেই প্রাথমিক মান্যতা দিতে হবে। তবে যদি উনি সেখানে ধারাভাষ্যকার হিসেবে গিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই শ্রোতা ও দর্শকগণ তাঁর কাছে শ্রেষ্ঠ মানের ধারাভাষ্য দাবি করতেই পারেন।
রহিম নবী ফুটবলার হিসেবে অবশ্যই প্রণম্য; বাংলাকে তিনি গর্বিত করেছেন। ফুটবলার ও ব্যক্তি হিসেবে যথেষ্ট স্মার্ট, উত্তর তাঁরও ঠোঁটের ডগায়। কিন্তু ধারাভাষ্যকার হতে গেলে ভাষ্য অর্থাৎ ভাষাটা আসল, ওটা না শিখলে ভাষ্যকার হওয়া মুশকিল। আশাকরি ভবিষ্যতে উনি একজন খ্যাতনামা ভাষ্যকার হয়ে উঠবেন - সোপার্জিত যোগ্যতা ও নিরন্তর পরিশ্রমের মাধ্যমে।
এখানে পৌঁছে একটি তথ্য সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই - একটি লেখায় মুর্শিদাবাদের এক কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব 'অতীন্দ্র মজুমদার' জানাচ্ছেন - ভারতবর্ষের বাইরে থেকে বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম রেডিওতে খেলার ধারাবিবরণী দেয়ার ব্যাপারে তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি। ১৯৬৬ সালের ২৭-৩০ ডিসেম্বর রেডিও অস্ট্রেলিয়া থেকে তিনি ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার ডেভিস কাপের (টেনিস) ফাইনাল খেলার বাংলা ধারাবিবরণী দেন। পৃথিবীর আর কোন দেশ থেকে তার আগে বাংলা ভাষায় কোন ক্রীড়া ধারাবিবরণী দেওয়া হয়নি। সুতরাং ভারতের বাইরে বাংলায় ক্রীড়া ধারাবিবরণীর ক্ষেত্রে একজন বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদবাসীই পথিকৃৎ।
তাঁর লেখায় তিনি আরো জানাচ্ছেন, অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের প্রথম ফুটবল দলের সফরে ১৯৩৭ সালে অধিনায়ক ছিলেন এই বহরমপুরেরই ভূমিসন্তান 'করুণাশংকর ভট্টাচার্য'। এই তথ্যটিও বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদ তথা বাংলার ফুটবল জগতে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
প্রতিবেদন- অরিন্দম চন্দ্র
Post a Comment