Header Ads

গোয়েন্দাগিরিতে চরম দক্ষ বাংলার মহিলা গোয়েন্দা চরিত্ররাও


ফেলুদা ও ব্যোমকেশদের মতো বাঙালি পুরুষ গোয়েন্দাদের ভিড়ে ক্রমশ চাপা পড়ে গেছে বাঙালি মহিলা গোয়েন্দারা। বাংলা সাহিত্যে নারীরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই গোয়েন্দাগিরিতে। নিজেদের বুদ্ধি ও শক্তি খরচ করে বারংবার সফল হয়েছে বাংলার মহিলা গোয়েন্দা চরিত্রগুলি। বাংলা সাহিত্যে পুরুষ গোয়েন্দার সংখ্যার তুলনায় মহিলা গোয়েন্দার সংখ্যা একটু কম৷ আগে সেভাবে মহিলা গোয়েন্দাদের নিয়ে চর্চা না হলেও বর্তমানে বাঙালি মহিলা গোয়েন্দা নিয়ে চর্চা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাঙালি মহিলা গোয়েন্দাদের নিয়ে নানান ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্রও তৈরি হচ্ছে। 


বাঙালি মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র মিতিন মাসিকে নিয়ে বাংলাতে 'মিতিন মাসি' নামে চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। রাঙা পিসিকে নিয়ে 'শুভ মহরৎ' নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। দময়ন্তীকে নিয়ে 'দময়ন্তী' ও 'নকল হীরে' নামে দুটো ওয়েব সিরিজও তৈরি হয়েছে। যেগুলো বেশ সফলও হয়েছে। মহিলা গোয়েন্দার চাহিদা বাংলাতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেটা খুবই প্রয়োজন ছিল, কারণ নতুন প্রজন্মকে শুধু ফেলুদা বা ব্যোমকেশ জানলেই হবে না তাকে মিতিন মাসি, জগাপিসি ও বিন্দি পিসির কথাও জানতে হবে। গোয়েন্দা চরিত্রে বাঙালি পুরুষ কিংবা নারী সকলেই যে শ্রেষ্ঠ তা বাঙালি সাহিত্যপ্রেমী মানুষদের জানা উচিৎ। 

বাংলার মহিলা গোয়েন্দা চরিত্রগুলোও বেশ মজাদার। যেমন 'গোয়েন্দা গার্গী'। বিশিষ্ট সাহিত্যিক তপন বন্দোপাধ্যায়ের সৃষ্টি করা মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র হলো 'গার্গী'৷ তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের ছাত্রী ও সখের রহস্যভেদী। বেশিরভাগ সময় অযাচিত ভাবে রহস্যজালে জড়িয়ে পড়ে গার্গী ও বুদ্ধির দৌড়ে অপরাধীকে পরাস্ত করেন। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্যের সৃষ্টি করা মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র 'মিতিন মাসি'।  যাকে বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। মিতিন মাসির জ্ঞানের কোনো তুলনা হয়না। ফরেনসিক বিজ্ঞান, অপরাধীদের মনঃস্তত্ত্ব, আধুনিক কিংবা প্রাচীনকালের অস্ত্রশস্ত্রের খুঁটিনাটি, দেশ-বিদেশের ইতিহাস, শারীরবিদ্যা প্রভৃতি বহুবিধ বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে মিতিন মাসির। আবার বাচ্চা সামলানো, ঘর গোছানো, রান্না করা প্রভৃতি তথাকথিত 'মেয়েলি' কাজগুলোতেও মিতিন মাসি পারদর্শী। 

সাহিত্যিক প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর লেখা 'গোয়েন্দা কৃষ্ণা' হলো বাংলার প্রথম মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র। একজন নারীর অসীম ক্ষমতা, দক্ষতা ও সাহস নিয়ে জন্ম হয় মহিলা গোয়েন্দা 'কৃষ্ণা'র। একজন মেয়ে নিজের উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে সেই সবকিছু তুলে ধরা হয় 'ডিটেকটিভ কৃষ্ণা' সিরিজে। 

সাহিত্যিক সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের সৃষ্টি করা মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র হলো 'বিন্দিপিসি'। কাঁথা সেলাই করে আর রাজ্যের খবর শুনে জীবন কাটিয়ে ফেলা একজন গ্রাম্য অবিবাহিত মহিলা। যাকে লোকে বিন্দিপিসি বলে ডাকে। তিনিই কিনা ঘরে বসে অতীতের এক হত্যারহস্যের গল্প শুনতে শুনতে জট ছাড়িয়ে ফেললেন তার।  

প্রখ্যাত সাহিত্যিক মনোজ সেনের লেখা ডিটেকটিভ 'দময়ন্তী' বেশ জনপ্রিয় একটি গোয়েন্দা চরিত্র। তিনি পেশায় ইতিহাসের অধ্যাপিকা ও নেশা গোয়েন্দাগিরি। বিবাহিত জীবনেই একের পর এক রহস্যের সমাধান করে তিনি একজন সত্যান্বেষী হয়ে ওঠেন। সাহিত্যিক অজিতকৃষ্ণ বসু হাজির করেন সায়েন্স কলেজ থেকে এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম নন্দিনী সোমকে। অজিতকৃষ্ণ বসু হাজির করেছিলেন সায়েন্স কলেজ থেকে এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম নন্দিনী সোমকে।

সাহিত্যিক নলিনী দাশের কিশোরপাঠ্য গোয়েন্দা 'গণ্ডালু' সিরিজে চার মহিলা গোয়েন্দার পরিচয় পাওয়া যায়। এককভাবে গোয়েন্দাগিরি নয়, এই সিরিজের মূল ইউএসপি হয়ে উঠেছিল চারটি মেয়ের বন্ধুত্বের জের। 'ডিটেকটিভ কৃষ্ণা'র জনপ্রিয়তার পর মহিলা গোয়েন্দা অগ্নিশিখাকে কেন্দ্র করে একটি পৃথক সিরিজ 'কুমারিকা'-র প্রবর্তন করে দেব সাহিত্য কুটীর৷ 

বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের প্রাথমিক যুগে নারী, ক্রাইম ও নিষিদ্ধ যৌনতাকে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছিল একই সমীকরণে৷ আটের দশকে এই ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ জানায় প্রখ্যাত লেখক অদ্রীশ বর্ধনের 'গোয়েন্দানী নারায়ণী'৷ সাম্প্রতিক কালে লেখিকা দেবারিতা মুখোপাধ্যায় লিখেছেন মহিলা গোয়েন্দা 'রুদ্রাণী'র রহস্য সমাধানের গল্প। 

তথ্যসূত্র- সিলি পয়েন্ট, রোর বাংলা 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments