Header Ads

অরুণ রায় পরিচালিত ছবি 'হীরালাল' যেন চোখের সামনে ইতিহাস লিখতে থাকে


বায়োস্কোপে ছবি তুলে প্রথম চলচ্চিত্রকে ভারতের মাটিতে নিয়ে আসেন হীরালাল সেন। ভারতীয় সিনেমার প্রকৃত জনক কিন্তু তিনিই। তৎকালীন সময়ে কয়েকজন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির চক্রান্তে হীরালাল সেন ইতিহাসের আড়ালে থেকে যান। বিস্মৃতির আড়ালে থেকে যাওয়া এক মহান বাঙালি হীরালাল সেনকে নিয়ে বানানো বিখ্যাত পরিচালক অরুণ রায়ের ছবি 'হীরালাল' মুক্তি পেয়েছিল। সেই ছবি এখন হইচইতে দেখা যাচ্ছে। 


হীরালাল সেনের মতো বাংলার উজ্জ্বল নক্ষত্রদের নিয়ে ছবি বানানোর যথেষ্ট প্রয়োজন ছিল। কারণ বাঙালিকে তার হৃতগৌরবের ইতিহাস সহজে ভুলে গেলে চলবে না। বাঙালিকে তার শিকড়ের সাথে আবদ্ধ থাকতে হবে। পরিচালক অরুণ রায় বাংলা ও বাঙালিকে নিয়ে ঐতিহাসিক ছবি বানাতে বেশ পছন্দ করেন। এর আগে তিনি ঐতিহাসিক ছবি 'এগারো' তৈরি করেছিলেন। তারপর 'হীরালাল', সম্প্রতি বিনয়-বাদল-দীনেশকে নিয়ে '৮/১২' নামে একটি ছবি তৈরি করছেন তিনি। 

অরুণ রায় পরিচালিত 'হীরালাল' ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা ছবি। সবার প্রথমে ছবিটির চরিত্র বাছাই থেকে দৃশ্য নির্ধারণ ও অভিনয়ের প্রশংসা করতে হয়। হীরালাল সেনের চরিত্রে নবাগত কিঞ্জল নন্দের অভিনয় যে-কোনো দর্শককে মুগ্ধ করবে। শুধু তাই নয়, অমরেন্দ্রনাথ দত্তের চরিত্রে অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের, গিরিশ ঘোষের চরিত্রে খরাজ মুখোপাধ্যায় ও জামশেদজি ফ্রামজি ম্যাডানের চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, হেমাঙ্গিনীর চরিত্রে অনুষ্কা চক্রবর্তী এবং কুসুমকুমারীর চরিত্রে তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস সকলে দুর্ধর্ষ অভিনয় করেছেন। 

পরিচালক নিজের হাতে ছবিটিকে জীবন্তকে করে তুলেছেন। যেন ইতিহাস চোখের সামনে লেখা হচ্ছে। ছবির এক একটা ফ্রেম অনেক জানা-অজানা গল্প বলতে থাকে। দৃশ্যের সঙ্গে আবহসঙ্গীতের অনবদ্য সংযোজনও ছবিটিকে বর্ণময় করে তুলেছে। ছবির শুরু থেকে শেষ পুরোটাই টানটান। প্রথম ছবি হিসেবে কিঞ্জল নন্দ যে কী পরিমাণ পরিশ্রম করেছেন তা ছবিটি দেখলেই বোঝা যায়। 

হীরালাল সেনের বায়োস্কোপে ছবি তোলা বা গিরিশ ঘোষের সঙ্গে অমরেন্দ্রনাথ দত্তের মনোমালিন্য, অমরেন্দ্রনাথ দত্তের অহংকারে ডুবে যাওয়ার দৃশ্য, কুসুমজবা তেলের বিজ্ঞাপনের দৃশ্য, জামশেদজি ফ্রামজি ম্যাডানের সঙ্গে বায়োস্কোপ ব্যবসাতে হীরালালের রাজী না হওয়া প্রভৃতি দৃশ্যগুলো সারা জীবন মনে রাখার মতো। 

ছবিটি অত্যন্ত তথ্যবহুল ও গবেষণামূলক। ছবিটিকে একটি পিরিয়ড ড্রামাও বলা যেতে পারে৷ বায়োপিক বানানোর জন্য যে মাউন্টিং দরকার হয় তা ছবির সিংহভাগ জুড়ে বিদ্যমান। ছবিটি থেকে অনেক কিছু জানা যায়৷ হীরালাল সেনকে যদি কেউ পুরোপুরি জানতে চান তাহলে তাকে এই ছবিটি অবশ্যই দেখা প্রয়োজন। 'হীরালাল' ছবিটিকে শুধু নিছকই বায়োপিক বললে ভুল হবে, এটি হীরালাল সেনের জীবনের জার্নির গল্প। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments