ব্রিটিশ আমলেই ফটোগ্রাফি করতেন সরোজিনী ঘোষ, তিনিই প্রথম বাঙালি মহিলা ফটোগ্রাফার
সেকেলে ফটোগ্রাফিতে মহিলাদের ব্যাপারটা লোকে একটু মন্দ চোখে দেখতো। ফটোগ্রাফির কাজেও তখন সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য দেখা যেত। কিন্তু বাস্তবে কোনো পেশার লিঙ্গভেদ হয়না। উভয় লিঙ্গেরই সব পেশাতে কাজ করবার অধিকার আছে। সে যুগে পুরুষতান্ত্রিকতা চরম পর্যায়ে ছিল। তবে একালেও যে পুরুষতান্ত্রিকতা একেবারেই নেই বলা ভুল হবে। এখনও পুরুষতান্ত্রিকতা যথেষ্ট বিদ্যমান।
পুরুষতান্ত্রিক যুগেও সেকেলে প্রথাগত ট্যাবু ভেঙে এগিয়েছেন বহু বাঙালি নারী। সময়টা আশির দশক৷ কলকাতার বেশিরভাগ ফটোগ্রাফির স্টুডিও গুলোতে ফটোগ্রাফাররা বেশিরভাগই ছিলেন ইংরেজ। সেখানে ছবি তুলে আসতেন বাঙালি মহিলারা। অধিকাংশ মহিলারা ধনী বাড়ির। পুরো পালকিটাই ঢাকা। তাঁদের সঙ্গে থাকত দাসী৷ স্টুডিও তে সেই সময় পুরুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। আগে থেকেই ক্যামেরা, লেন্স ফটোগ্রাফার তৈরি থাকত৷ তাঁরা স্টুডিয়োতে ঢুকলেই ক্যামেরা কথা বলে উঠত। ছবি তোলার কাজ শেষ হলেই নিমেষের মধ্য পালকির দরজা বন্ধ৷ যেভাবে আসতেন ওঁরা সেভাবেই উধাও হয়ে যেতেন।
ঊনবিংশ শতকে বাঙালি নারীদের মধ্যে প্রথম পেশাদার ফটোগ্রাফি শুরু করেছিলেন সরোজিনী ঘোষ। এমনকি তিনি একটি স্টুডিও পর্যন্ত খুলেছিলেন। ১৮৯৮ সালের ১০ ই জানুয়ারি অমৃতবাজার পত্রিকায় সরোজিনী ঘোষকে নিয়ে 'লেডি ফটোগ্রাফার' নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রথম বাঙালি মহিলা ফটোগ্রাফার সরোজিনী ঘোষ স্টুডিও স্থাপন করে ফটোগ্রাফির চর্চা শুরু করেন। তিনি এই স্টুডিও-র নাম রাখেন 'দ্য মহিলা আর্ট স্টুডিও এন্ড আর্ট সেন্টার'। যে স্টুডিওটির ঠিকানা ছিল ৩২ নম্বর কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট। তাঁর হাতে গড়া এই স্টুডিও বাঙালি মহিলাদের ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহের নিদর্শন ছিল। তাঁর স্টুডিওকে ঘিরে সেসময় মহিলাদের উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। কোনও পুরুষ ফটোগ্রাফার নয়, মেমসাহেব নয়, তাঁদেরই মতো নারী। ক্যামেরা হাতে এক বাঙালি মহিলা।
তিনি দেবলীনা সেন রায়, মনোবীণা সেন রায় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে একটি ফটোগ্রাফিক সিরিজ করেছিলেন 'টুয়েন্টি ফাইভ পোট্রেটস অফ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর' নামে। ইলাস্ট্রেটেড ডেইলি'তে নিয়মিত তাঁদের ছবি প্রকাশিত হত। এর মধ্যে পুরীতে থাকাকালীন; কবির ছবিও ছিল। তাঁদের প্রথম ফটোগ্রাফ বেরোয় 'সচিত্র ভারত' জার্নালে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment