একসময় ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত চলাচল করতো রকেট স্টিমার
আজ থেকে শতবর্ষ আগে ঢাকা থেকে কলকাতা রুটে চলাচল করতো রকেট স্টিমার৷ যদিও পরবর্তীকালে এই রুট বন্ধ হয়ে যায়। সর্বপ্রথম এই স্টিমারগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহৃত হতো। আশির দশকে কয়লার পরিবর্তে স্টিমারগুলিতে ডিজেলের ব্যবহার শুরু হয়। দুইটি বড় বড় প্যাডেলের সাহায্যে লঞ্চটি সামনের দিকে এগিয়ে যেত বলে এই স্টিমারের নামকরণ করা হয় প্যাডেল স্টিমার। তবে পরবর্তীকালে প্যাডেল স্টিমার তৎকালীন সময়ে দ্রুতগতির কারণে রকেট স্টিমার নামে অধিক পরিচিতি লাভ করে।
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ডায়েরিতে উল্লেখ পাওয়া যায় রকেট স্টিমারের। তিনি এই স্টিমারে যাত্রাও করেছেন। তাঁর গল্প উপন্যাসে বারবারই তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের ঘটনাবলি উঠে এসেছে। 'মৃত্যর গন্ধ' নামক এক গল্পে তিনি বিবরণে লিখেন "বিবাহ করিয়া আসিবার সময় সেই স্টিমারেই তো, দুপুরের গরম অসহ্য হইয়া উঠিল নীলিমার কাছে। বড়ো নদীর উপর স্টিমারের ঘুরপাকে সে মাথা ঠিক রাখিতে পারিল না। বরযাত্রীদের কাছে সেদিন গোলাপ জল অডিকোলন নানারকম জিনিসই ছিল, লেবু কাটিয়া কাটিয়া খাইতে দেওয়া হইল। হুকুমের ভিতর নতুন বধূর পরিচর্যা সেদিন বেশ জমিয়াছিল।"
কেবল জীবনানন্দই নয়, রকেট স্টিমারে দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দ্বিতীয় রানী এলিজাবেথ ও মহাত্মা গান্ধীও যাত্রা করেছিলেন।
কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে ১৯২৮ সালে 'মাসহুদ' ও ১৯৩৮ সালে 'অস্টিচ' নামক দুটো রকেট স্টিমার তৈরি করা হয়৷ লোকমুখে শোনা যায়, একটা সময় ইংল্যান্ডের 'রিভার আর স্টিম ন্যাভিগেশন' কোম্পানির বিশাল সব স্টিমার চলাচল করতো ওপার বাংলাতে। সেই সময় এই যানবাহনটি ঢাকা-বরিশাল, বরিশাল-গোয়ালন্দ রুটে পাড়ি জমাত। তখনকার মানুষ এ স্টিমারে করে গোয়ালন্দ গিয়ে ট্রেনে কলকাতা যেত৷
ঢাকা থেকে কলকাতা রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর স্টিমারগুলো ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত যাতায়াত শুরু করে। বর্তমানে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ঢাকার বুড়িগঙ্গা থেকে বাংলাদেশের প্রধান নদী পেরিয়ে রকেট স্টিমারগুলো বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করছে। বর্তমানে গোটা পৃথিবীতে খুব বেশি রকেট স্টিমার নেই। তার মধ্যে পিএস মাসহুদ, পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা, পিএস টার্ন এবং এমভি শেলা এই পাঁচটি রকেট স্টিমার আছে বাংলাদেশে। এর প্রত্যেকটিই মাসহুদের কাছাকাছি সময়ে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে তৈরি হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো 'মাসহুদ' এবং 'অস্ট্রিচ'।
তথ্যসূত্র- রোর বাংলা, ভ্রমণগাইড, টিবিএস নিউজ।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment