Header Ads

চলচ্চিত্রের কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত


১৯৪৪ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ার আনারে জন্মানো ছেলেটা ক্লাস থ্রি-ফোরে 'পথের পাঁচালী' দেখেছিল, কবিতা লিখেছিল ১৮ বছর বয়সে। সেই শুরু, তারপর আস্তে আস্তে পুরুলিয়া, সিনেমা আর কবিতা তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেল। তাঁকে চলচ্চিত্রের কবি বলা অত্যুক্তি হবেনা, যেভাবে তিনি তাঁর একাধিক ছবিতে মানুষের অন্তরের সঙ্গে পুরুলিয়ার মেঠো অনুর্বর প্রান্তরকে মিলিয়েছেন, তা কবিতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কবি হলেও তাঁর 'নিম অন্নপূর্ণা', 'চরাচর', 'টোপ', 'উত্তরা' প্রভৃতি ছবিতে তিনি শ্রেণী সংগ্রামকে দিয়েছেন অন্য মাত্রা। এছাড়াও তাঁর অন্যতম প্রিয় বিষয় ছিল মানব মন ও জাদুবাস্তব। 


বুদ্ধদেব বাবুর কবিতা ও ছবিতে ম্যাজিক রিয়্যালিজম্ তখন থেকে দেখা যায় যখন বাংলা কাব্যে বা ছবিতে কেউ শব্দটার অর্থ জানা তো দূর অস্ত, শব্দটাই শোনেননি। তাঁর  'লাল দরজা', 'তাহাদের কথা', 'আনোয়ার কা আজব কিসসা' ইত্যাদি ছবিতে উঠে এসেছে মানুষের একাকিত্ব, মানসিক টানাপোড়েন এবং এর সঙ্গে মিলেছে extended reality যা এই আপাত চেনা বিষয়বস্তুকে দিয়েছে এক অচেনা কাব্যিক টুইস্ট। ঠিক তাঁর 'এপিটাফ' কবিতার মতো,:

"হাজারো মানুষ রোবট হয়ে যাচ্ছে
চলে আসছে এ গ্রহে
যেমন এসেছিলাম আমি"। 

এ সমস্তই তাঁর ভাবনা, তাঁর কথায়, "গ্লাসে একটু জল রাখলাম, তার সাথে একটু বাস্তবতা মেলালাম, তার সাথে একটু স্বপ্ন মেলালাম, তার সাথে একটু কবিতা মেলালাম তারপর যে shake টা তৈরি হলো সেটাই আমার সিনেমা।” কিন্তু আজ তাঁর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে আমাদের ভাবার সময় এসেছে, আদৌ আমরা এই 'Shake' এর স্বাদ কতটুকু গ্রহণ করেছি? শুধু সাতটা স্বর্ণকমল, ছাব্বিশটা রৌপ্যকমল আর একাধিক জাতীয় পুরষ্কার ই কি একজন চলচ্চিত্র পরিচালককে সমাদর করার মানদন্ড? যেখানে তাঁর ছবি লোকার্নোর মত ফেস্টিভ্যালে সমাদৃত হয়, সেখানে আমরা কতজন ভারতীয়, বিশেষত বাঙালিরা তাঁর ছবি দেখতে চেয়েছি? সাধারণ দর্শকের কথা ছেড়েও যদি দিই, আমাদের মতন নবপ্রজন্মের পরিচালক, বা ছবি করিয়েদের কাছেই বা তাঁর গুরুত্ব কতখানি? এই প্রশ্নগুলো সত্যিই ভাবার সময় এসেছে। 

কেন দেশে-বিদেশে যারপরনাই সমাদৃত ও প্রশংসিত হওয়ার পরও তাঁর বেশিরভাগ ছবিই বানিজ্যিক ভাবে অসফল? যেদিন আমরা দর্শক হিসেবে, সিনেমাপ্রেমী হিসেবে, সিনেমা করিয়ে এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো সেদিন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হবে।

প্রতিবেদন- দিগন্ত দে (চিত্র পরিচালক)



No comments