কয়েকদিনের মধ্যেই ডিজিটাল হচ্ছে সন্দেশ পত্রিকা, যে খবরটি সম্পূর্ণ ভুয়ো
বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হলো 'সন্দেশ পত্রিকা'। যদি কেউ প্রশ্ন করেন যে বাংলা সাহিত্যের ইউনিক পত্রিকা কোনগুলো? তাহলে সবার প্রথমে 'সন্দেশ পত্রিকা'র কথা মাথায় আসে আপামর বাঙালি পাঠকসমাজের। অন্যান্য পত্রিকাতেও যে ইউনিক কাজ হয়না সেটাও বলা ভুল হবে। কিন্তু 'সন্দেশ পত্রিকা'র সাথে বাঙালির এক অদ্ভুত নাড়ির যোগ রয়েছে।
'সন্দেশ পত্রিকা'তে বাঙালির নাড়ির যোগ কীভাবে আছে? আরে মশাই, পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। সুকুমার রায়, সত্যজিৎ রায় ও উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছোটদের জন্য যত লেখা তার সিংহভাগই ছাপা হয়েছিল এই পত্রিকাতেই। হাঁসজারু, বকচ্ছপ, হাতিমি, ফেলুদা ও প্রফেসর শঙ্কুর মতো সৃষ্টি প্রকাশিত হয়েছিল সন্দেশ পত্রিকাতেই।
১৯১৩ সালের এপ্রিলে শুরু হয়েছিল এই পত্রিকার যাত্রা। ১৯১৫ সালে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মৃত্যুর পর সন্দেশের হাল ধরেন সুকুমার রায়। সন্দেশ শুধুমাত্র নিছক সাহিত্য পত্রিকাই নয়, এর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য ও পরম্পরা। ১৯৩৪ সালের পর দীর্ঘ সাতাশ বছরের বিরতি৷ ১৯৬১ সালের মে মাসে সত্যজিৎ রায় ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের যৌথ সম্পাদনায় পুনঃপ্রকাশ সন্দেশের। একে একে সম্পাদক হয়ে যোগদান করেন লীলা মজুমদার, নলিনী দাশ, বিজয়া রায় এবং সন্দীপ রায়। যে 'সন্দেশ' বর্তমানেও অব্যাহত।
'সন্দেশ' পত্রিকার বয়সও একশো পেরিয়ে গেছে। এই একশো বছরে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে পত্রিকাটিতে। লেখার মান থেকে শুরু করে পৃষ্ঠা, মলাট ও ছবি-ছাবা প্রায় সবেরই বদল এসেছে। ঘটনাবহুল যাত্রাপথে মাঝেমধ্যে থেমে গিয়েও আবার চলা। ২০১৪ থেকে নিয়মিত হয়েছে সন্দেশ। গত চার-পাঁচ বছরে সন্দেশ পত্রিকার বিক্রি অনেক বেড়েছে।
সন্দেশ পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যার দারুণ জনপ্রিয়তা রয়েছে বাংলা বইয়ের বাজারে। প্রতিবছর সন্দেশ শারদীয়া সংখ্যার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সন্দেশ পত্রিকার অবস্থা এখন বেশ ভালো। গত চার থেকে পাঁচ বছরে সন্দেশ পত্রিকার বিক্রি অনেক বেড়েছে। প্রতিবছর সন্দেশের শারদীয়া সংখ্যার দারুণ চাহিদা রয়েছে। গতবছর লকডাউনের সময় শারদীয়া সংখ্যার দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপানো হয় আর দুটো সংস্করণই অল্প সময়েই নিঃশেষিত হয়ে যায়। লকডাউনের বাজারে যা অকল্পনীয় ব্যাপার৷
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে খবর হয়েছে "এবার ডিজিটাল হচ্ছে 'সন্দেশ' পত্রিকা"। যে খবরটি পুরোপুরি ভুয়ো। 'সন্দেশ পত্রিকা' সদস্যদের আরেকটি পত্রিকা 'বিচিত্রপত্র', যে পত্রিকাটি পরিচালনা করেন অয়ন চট্টোপাধ্যায়, সৌম্যকান্তি দত্ত ও সৌরদীপ বন্দোপাধ্যায়। এই পত্রিকার টিমের তরফে জানা যাচ্ছে সন্দেশ পত্রিকার ডিজিটাল সংস্করণের পরিকল্পনা চলছে কিন্তু এই মুহূর্তে ডিজিটাল হচ্ছে এ খবরের কোনো সত্যতা নেই।
২০১৭ সাল থেকে সন্দেশ পত্রিকার বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা সন্দেশ পত্রিকার একটা আর্কাইভ তৈরির পরিকল্পনা শুরু করেন। তাঁরা সন্দেশ পত্রিকার বিষয়ে 'সন্দেশ ১০০' নামে একটি ডকুমেন্টরি বানাতে গিয়ে বুঝতে পেরেছেন যে এ দেশে আর্কাইভের অবস্থা সাংঘাতিক খারাপ। এ দেশে যেন কারও মধ্যে আর্কাইভ তৈরির কোনো মানসিকতাই নেই। তাঁরা ডকুমেন্টরি বানাতে গিয়ে দেখেছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তথ্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেভাবে। এখান থেকেই তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে এই মুহূর্তে সন্দেশের আর্কাইভ বানানো যথেষ্ট প্রয়োজন। সেই জায়গা থেকেই তাদের সন্দেশকে ইবুক সংস্করণে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
'বিচিত্রপত্র' পত্রিকার তরফে জানা যাচ্ছে বিচিত্রপত্র -এর একটি ওয়েবসাইট চালু হচ্ছে। যেখানে তারা সন্দেশকেও জায়গা দিচ্ছেন৷ সেখানে সন্দেশের কিছু আর্কাইভ করা থাকবে; পুরানো লেখাপত্র, নথিপত্র ইত্যাদি। সেটা ওয়েবসাইট চালু হলে সকলে দেখতে পাবেন। কিন্তু সন্দেশ পত্রিকাকে নিয়ে ইদানীং যে একটা ভুয়ো খবর রটেছে, সেরকম পরিকল্পনা আপাতত নেই। পরিকল্পনা যে একেবারেই নেই তা বলা ভুল, পরিকল্পনা হচ্ছে তবে এই মুহূর্তে নয়। এটার ক্ষেত্রে অনেক অনুমতির ব্যাপার আছে। এসব নিয়ে এখন অনেক মিটিং ও আলোচনা চলছে। এখনও পর্যন্ত ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিচিত্রপত্র-র ওয়েবসাইটে সন্দেশকে জায়গা দেওয়ার বিষয়টিও এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি। ওটাও পরিকল্পনার পর্যায়েই রয়েছে।
'সন্দেশ' ও 'বিচিত্রপত্র' - এই গোটা টিমের তরফ থেকে বলা হয়েছে "সকল পাঠকদের অনুরোধ, কেউ কোনও ভুল খবরে ও ভুল রটনায় পা দেবেন না। আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং 'বিচিত্রপত্র'-র আসন্ন ওয়েবসাইটে যা খবর দেওয়া হবে এর বাইরে পত্রিকা সম্পর্কে কোনও খবরের দায় 'সন্দেশ' ও 'বিচিত্রপত্র' নেবে না।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment