'রাণী রাসমণি' সিরিয়ালের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের
ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠলো 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি' ধারাবাহিকের বিরুদ্ধে। এই ধারাবাহিকে কালীঘাট ও রায়চৌধুরী পরিবারকে নিয়ে যে ঘটনাগুলো দেখানো হয়েছে তাতে নানান ভ্রান্তি রয়েছে। ঠিক এমনই অভিযোগ তুলেছে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ।
সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের সম্পাদক দেবর্ষি রায় চৌধুরী বলেন, "করুণাময়ী রাণী রাসমণি ধারাবাহিকে এমন অনেক ঘটনাই দেখানো হয়েছে যা শুধুই কাল্পনিক এবং ইতিহাসের বিকৃতি। আমি অন্য ঘটনাগুলির প্রসঙ্গে মন্তব্য করছি না কিন্তু যে ঘটনাগুলি আমাদের সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার সম্পর্কিত দেখানো হয়েছিল তা চূড়ান্ত রকম ইতিহাস বিকৃতি ও কাল্পনিক।"
ঠিক কী দেখানো হয়েছে ধারাবাহিকে? এ প্রসঙ্গে দেবর্ষি রায় চৌধুরী জানান, "দেখানো হয়েছিল যে সাবর্ণ জমিদার সন্তোষ রায় চৌধুরী নাকি রাণী রাসমণির শ্বশুরবাড়ী গিয়ে রাসমণিকে কালীঘাট মন্দিরে আসবার আমন্ত্রণ করছিলেন। এটা হতে পারে না। কারণটা বলছি।
রাসমণি জন্মগ্রহন করেন ১৭৯৩ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর আর বিয়ে হয় এগারো বছর বয়সে অর্থাৎ ১৮০৪ সাল নাগাত। তাহলে রাসমণি কলকাতায় শ্বশুরবাড়ীতে ছিলেন ১৮০৪ থেকে তাঁর ১৮৬১ সালে মৃত্যু পর্যন্ত। মজার ব্যাপার হলো রাসমণির বিয়ের পাঁচ বছর আগেই ১৭৯৯ সালে সন্তোষ রায় চৌধুরী পরলোকগমন করেন। আর কালীঘাটের মন্দির তখনও সম্পূর্ণ হয়নি। সন্তোষ রায় চৌধুরীর নাতি রাজীবলোচন রায় চৌধুরী ১৮০৯ সালে কালীঘাট মন্দিরের নির্মাণ সম্পূর্ণ করেন। অর্থাৎ রাসমণির সঙ্গে সন্তোষ রায় চৌধুরীর কোনদিনই দেখা হয়নি।"
কেবল এখানেই নয়, আরো বেশ কিছু তথ্যভ্রান্তির অভিযোগ তুলেছে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ। এই ধারাবাহিকে দেখানো হয়েছে কালীঘাটের ব্রহ্মশীলা আদিগঙ্গার ধারে পড়ে রয়েছে। পরবর্তীকালে কাপালিকরা পুজো করে তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করছেন। সেই সময় রাণি রাসমণিকে নৌকাপথে আসতেও দেখা যায়। অথচ শিলাখণ্ডের ঐ ঘটনা ১৫৭০ সালের অর্থাৎ রাসমণির জন্মের প্রায় আড়াইশো বছর আগেকার ঘটনা। এমনকি সেই সময় কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন এলাকায় যেমন বনজঙ্গল দেখানো হয়েছে তাও ইতিহাসের সঙ্গে একেবারেই মেলে না। কারণ ততদিনে কালীঘাট নামক জনপদটি তৈরি হয়ে গিয়েছে।
দেবর্ষিবাবু আরো বলেন "ধারাবাহিকের লেখক ভুল তথ্য পেশ করেছেন। যদি উনি সত্য ইতিহাস লিখতে চাইতেন তাহলে একবার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। সেটা না করে ভুলে ভরা কিছু বই পড়ে গল্প লিখেছেন। অবশ্য ঠিকই আছে ধারাবাহিকের শুরুর সময় পর্দায় বলেই দেওয়া হয় যে এটি কাল্পনিক গল্প। অর্থাৎ এখানে রাসমণি শুধুই ধারাবাহিকের কাল্পনিক নায়িকা- আমাদের শ্রদ্ধেয় ঐতিহাসিক চরিত্র রাণী রাসমণি নয়।। প্রথমা কাদম্বিনীর মত তথ্যবহুল ও ইতিহাসের প্রতিটা ঘটনা তুলে ধরে বায়োপিক কি করা যেত না?"
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment