Header Ads

৭ ই মে বিদায় নিয়েছেন বসিরহাটের প্রিয় 'সুভাষ স্যার', বসিরহাট আজকে সুভাষ শূন্য


বসিরহাটের এক আদর্শ স্কুল শিক্ষক সুভাষ কুণ্ডু। যিনি গত ৫০ বছর ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশানি পড়িয়েছেন বিনা পারিশ্রমিকে। বসিরহাটে আদর্শ ছাত্র তৈরি করতে তিনি ছিলেন একজন রোলমডেল। তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাকটিক্যাল করার সুবিধার জন্য বসিরহাটের বুকে গড়ে তুলেছিলেন আধুনিক ল্যাব 'ইনিস্টিটিউট অফ ফিজিক্স'৷ গত ৭ ই মে, ২০২১ তিনি চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে৷ বসিরহাটে এখন শুধুই শূন্যতা। বসিরহাটবাসীরা তাঁকে চোখের জলে বিদায় জানিয়েছেন। 


বসিরহাটের শিক্ষা জগতের একজন দিকপাল মানুষ ছিলেন সুভাষ কুণ্ডু৷ যার এক ডাকে তাঁর কাছে পড়াশোনার জন্য ভিড় করতো হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী৷ বসিরহাটের প্রতিটি লোক তাঁকে 'সুভাষ স্যার' নামে সম্বোধন করতেন। সুভাষবাবু কর্মসূত্রে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় বসিরহাট হাইস্কুলে পদার্থবিদ্যার একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করতেন। ২০০৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় পাঁচ দশক ধরে নিজ উদ্যোগে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন পড়িয়েছেন। 

পঞ্চাশ বছর ধরে বিনামূল্যে টিউশন পড়ানোর নজির খুব কম শিক্ষকেরই রয়েছে। সুভাষবাবুর কাছে শিক্ষাদানই ছিল সবচেয়ে বড়ো কথা৷ তিনি নিজের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সন্তানদের মতো স্নেহ করতেন। তিনি অর্থের মোহ ভুলে শিক্ষার আলো বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। 

তিনি টিউশন ছাড়াও পেনশনের টাকাতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৮৮ সালে বসিরহাট মহকুমার ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে বাড়িতে চাকরির টাকায় বানিয়েছিলেন আধুনিক ল্যাবরেটরি। যার নামকরণ করেছিলেন তিনি 'ইন্সটিটিউট অফ ফিজিক্স'। যে-কোনো স্কুল-কলেজের ল্যাবরেটরিকেও টেক্কা দিতে পারে তাঁর তৈরি এই ল্যাব। যে ল্যাবে পড়তে কোনো অর্থ লাগতো না। তিনি শিক্ষক থেকে ক্রমশ নিজে নিজেই হয়ে উঠেছিলেন এক প্রতিষ্ঠান। 

জীবনের বেশিরভাগ রোজগার তিনি খরচ করতেন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। এসির তলায় থাকা আভিজাত্য ত্যাগ করে কেবল পঞ্চাশ ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের সেবাতেই নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। ২০২০ সালে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন স্কুলের খুদে বিজ্ঞানীদের তৈরি ১৬৫ টি বিজ্ঞান মডেল প্রদর্শনীর পুরো খরচ বহন করেছিলেন তিনি৷ 

গোটা জীবন সুভাষবাবু ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত গড়ার কারিগর হিসেবেই কাটিয়ে দিলেন। শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও তিনি শিক্ষকতা চালিয়ে যেতেন।তাঁর বহু ছাত্র-ছাত্রী দেশে-বিদেশে নানান পেশাতে সুপ্রতিষ্ঠিত। এমন শিক্ষক আজকাল সচরাচর দেখা যায় না। বর্তমান সমাজে আদর্শ শিক্ষকের বড়োই অভাব। কাজেই সুভাষবাবুর মতো শিক্ষকদের চলে যাওয়া শিক্ষা-জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি আজ সশরীরে না থাকলেও বসিরহাটের মানুষের হৃদয়ে আইকন হয়ে তিনি থেকে যাবেন বহুদিন। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments