Header Ads

যেভাবে উৎপত্তি হয় 'হরি ঘোষের গোয়াল' নামক প্রবাদ বাক্যটি


কথায় বলে 'হরি ঘোষের গোয়াল '৷ প্রবাদ বাক্যটি  নিজেদের অজান্তেই হয়ত আমরা কতবার বলে ফেলি, অনেক কথার উদাহরণে টেনে আনি যেন 'হরি ঘোষের গোয়াল'!

আসলে এই প্রবাদ বাক্যটির সাথে জড়িয়ে আছে 
পুরনো কলকাতার এক প্রাচীন বাসিন্দার নাম৷ তিনি বেঁচে আছেন 'হরি ঘোষের গোয়াল' নামক প্রবাদ বাক্যে৷ স্বনামধন্য সেই মানুষটা হলেন হরি ঘোষ৷ কেমন ছিল হরি ঘোষের সেই গোয়াল ? চলুন একটু শুনে নেওয়া যাক সেই কাহিনি৷


হরি ঘোষের কিন্তু সত্যি-সত্যি কোনও গোয়াল ঘর ছিল না, বরং ছিল প্রকাণ্ড এক রান্নাঘর, ভোজনালয় বলা যেতে পারে যেখানে দিনরাত উনোন জ্বলছে৷ দেউড়ির দরজা সর্বদা সবার জন্য খোলা৷ যিনি আসুন, যেখান থেকে আসুন অন্ন-ব্যঞ্জন সর্বদা রেডি৷ যতক্ষণ খুশি থাকা আর খাওয়া কেউ না বলার নেই৷ 

'কলিকাতা সেকালের ও একালের' থেকে হরি ঘোষ সম্পর্কে যে তথ্য জানা যায়— 'ফ্রেঞ্চ-গভর্নর ডুপ্লের দেওয়ান- বলরাম ঘোষের দ্বিতীয় পুত্র শ্রী হরি ঘোষ৷ এই হরি ঘোষ পরে মুঙ্গেরে ইস্ট-ইন্ডিয়া-কোম্পানীর দেওয়ান পদে নিযুক্ত হন৷ হরি ঘোষ কোম্পানীর অধীনে দেওয়ানী করিয়া অনেক টাকা উপায় করিয়াছিলেন, তাঁহার প্রচুর সম্পত্তির অধিকাংশ তিনি দান-ধ্যানে ব্যয় করিয়া গিয়াছেন৷ অনেক বেকার কর্মহীন, গোত্রহীন জ্ঞাতি-গোত্র ও আত্মীয়বর্গ তাঁহার কলিকাতার আবাস-বাটিতে আশ্রয় লইয়া তাহা কোলাহল-সঙ্কুল করিয়া তুলিত৷ অনাহুত ও রবাহুতগণেরও নিত্য অন্নপ্রাপ্তির বিঘ্ন ঘটিত না৷ এই জন্য আজও কোন বাটীতে বেশী লোক থাকিলে লোকে বলে — 'এটা যেন হরি ঘোষের আড্ডা'৷ 

হরি ঘোষ অতি সরল প্রকৃতির লোক ছিলেন৷ তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ সারল্যের সুযোগ লইয়া এক অন্তরঙ্গ মিত্র তাঁহাকে প্রতারিত করিয়া তাঁহার যথাসর্বস্ব গ্রহণ করেন৷ জীবনের শেষ অবস্থাটা তাঁহার বড়ই কষ্টে কাটিয়াছিল৷ সংসার ত্যাগ করিয়া তিনি মনের দুঃখে কাশীবাসী হন'৷

হরিহর ঘোষের পূর্বপুরুষ ছিলেন মনোহর ঘোষ, রাসমোহন হলেন মনোহরের ছেলে আর তাঁর পুত্র বলরাম৷ হরিহর ঘোষের পিতৃদেব এই বলরাম ঘোষ৷

এখন প্রশ্ন হরিহর ঘোষের পূর্ব পুরুষেরা যদি ইতিহাসের পাতায় স্থান পেতে পারেন তবে তাঁর পুত্ররা কেন বাদ যাবেন? তাঁদের নামগুলি না হয় আমরা একটু জেনে রাখি; তাঁরা হলেন কাশীনাথ, বিশ্বনাথ, হরলাল ও রসিকলাল৷

তথ্যঋন ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার- পুরনো কলকাতার কথাচিত্র, পূর্ণেন্দু পত্রী

প্রতিবেদন- অরুণাভ সেন


No comments