সমাজের চেনা ছক ভেঙে, নিজের ইচ্ছের দাম দিতে শেখায় ক্যাব ড্রাইভার রমা সর্দার
আজকে ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে যেখানে প্রযুক্তির অসামান্য সাফল্য যেখানে প্রতিটা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান কথা বলে, সেখানে কিছু কিছু মিথ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাঁধা দেয়। একটা অলিখিত বিভাজন যেন সর্বদা গ্রাস করছে। ঠিক করে দেয় কোন কাজটা ছেলেদের জন্য আর কোন কাজটা মেয়েদের জন্য কিন্তু খুব কম মানুষই সেই চেনা ছকের গণ্ডি ভেঙে বেরিয়ে আসতে জানে, প্রমাণ করে দেয় কাজের কোনো লিঙ্গ ভেদ হয় না। তারা নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে জানে। ঠিক তেমনই একজন হলেন আনন্দপুর এর বাসিন্দা রমা সর্দার। যিনি পেশায় একজন ক্যাব ড্রাইভার। ঠিক যতবার ঘরের মেয়েদের বুঝিয়ে দেওয়া হয় তার চারপাশের গণ্ডিটাকে, ঠিক ততবার ক্যাবের চাকা ঘুরিয়ে ভুল প্রমাণ করে দেয় সেই সমস্ত মানুষদের।
ভোর থেকে রাত অব্দি পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কার্যত দাপটের সঙ্গে শহরতলীর অলিগলি ঘুরে বেড়ান রমা। কত মানুষ এখন তার ওপরে নির্ভরশীল সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দিতে হবে যাত্রীদের সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে বেড়াতে হয় তাকে। রোজ ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ডিউটি করেন তিনি।
২০০৮ সালে গাড়ি চালানো শেখা, শুধুমাত্র নিজের ভালোলাগার জন্য। কিন্তু ২০১৮ সালে সেই ভালো লাগাটাই বদলে গেল পেশায়। তবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় পাশে পেয়েছিলেন তার নয় বছরের বান্ধবী 'অঞ্জু হালদার'কে। বান্ধবী তাকে সাহস যুগিয়েছেন এই পেশায় আসার জন্য তথাকথিত ছক ভেঙে নতুন এর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন।
কিন্তু সব কিছুতেই তো নেগেটিভ দিক আছে যেমন বিপদ, নারী সুরক্ষা সেই সব কথার ভিত্তিতে রমা জানান "জীবনে তো কম্প্রোমাইজ করতে হবেই। সব জেনেই তো এই পেশায় এসেছি। আলাদা কিছু করব বলে যে পথে আসা, সেই পথে বাঁধা বিপত্তি তো আসবেই। মানিয়ে নিতে হবে। যদিও এখনও অবধি তেমন অসুবিধায় পড়িনি। আসলে আমি মনে করি, নিজে যদি ভাল হও সবাই সাহায্য করবে। সবার সঙ্গে তার জন্য ভাল ব্যবহার করতে হবে। ওটাই আসল। জীবনটাই তো একটা চ্যালেঞ্জ, সেটাকে নিতে হবে। সব কাজই সবার জন্য, যদি সেটা করার ইচ্ছে থাকে। ভয় পেলে চলবে না।"
আজকাল অনেকেই নতুন কিছু করে দেখাতে চায়, সেক্ষেত্রে রমা সর্দার অবশ্যই একজন উদাহরণই, তিনি শিখিয়ে দেন জীবন তথা সমাজকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কিভাবে নিজের ইচ্ছা আর ভালোবাসার দাম দিতে হয় শুধু সততা আর সত্যের পথ অবলম্বন করে। 'ইচ্ছে থাকলেই যে উপায় হয়' সেটা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন রমা সর্দার।
প্রতিবেদন- পৌলমী হালদার
Post a Comment