জিআই স্বীকৃতি পেতে চলেছে বাংলার কালো নুনিয়া ধান
বাংলার উত্তরের এক বিখ্যাত চাল হলো কালো নুনিয়া চাল যা প্রিন্স অফ রাইস নামে প্রসিদ্ধ। একসময় বাংলার উত্তরের জেলাগুলোতে শীত এলেই বাতাসে ম ম করতো এই ধানের গন্ধ। সাধারণত শীতকালে এই চালের গরম ভাত ঘিয়ের সাথে খাওয়া হয়। এছাড়াও পায়েস, খিচুড়ি, পিঠেপুলি, পোলাও সবকিছুতেই এই চাল স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। কিছুকাল আগেও প্রায় সকলেই এই ধান চাষ করতো৷ এখন আর সেভাবে সকলে এই ধানের চাষ করেন না।
কালো নুনিয়া ধান উৎপাদন কিছুটা কমলেও এর কদর বাড়াতে নেওয়া যাচ্ছে নানান পদক্ষেপ। ধীরে ধীরে কালো নুনিয়া ধানের চাষ একটু একটু করে বাড়ছে। ২০১৯ সালে ইন্ডিয়ান কোম্পানিস অ্যাক্ট মেনে পশ্চিমবঙ্গ এগ্রি মার্কেটিং কর্পোরেশন লিমিটেড গঠন করা হয়৷ এই সংস্থা বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও চাষি গোষ্ঠীদের সঙ্গে গোবিন্দভোগ ও তুলাইপঞ্জী চালকে ভারতে ও বিদেশে বঙ্গকৃষিশ্রী ব্র্যান্ড নামে জনপ্রিয় করে তুলতে বিপণনের কর্মসূচী শুরু করে। এর পাশাপাশি সুগন্ধী চাল যেমন তুলাইপঞ্জী, গোবিন্দভোগ, কালোনুনিয়া, কাতারিভোগ, রাধাতিলক, রাঁধুনিপাগল চালের প্রচারমূলক ড্রাইভ শুরু করা হয়।
ধান চাষে দেশের মধ্যে প্রথম হলো পশ্চিমবঙ্গ। বাংলার গোবিন্দভোগ চাল ও তুলাইপঞ্জী চালে রয়েছে জিআই স্বীকৃতি। এবার কালো নুনিয়া ধান পেতে চলেছে জিআই স্বীকৃতি। বাংলার নিজস্ব চাল হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত জিআই স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি এই চালকে। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট এগ্রিকালচারাল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে মিলিতভাবে জিআই-এর জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে সেই আবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্যের কৃষি দপ্তর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষ্ণবর্ণের এই সুগন্ধি চাল বাংলার নিজস্ব সম্পদ। ভূ-ভারতে আর কোথাও পাওয়া যায় না কালো নুনিয়া চাল। তাই এই চালকে বাংলার সম্পদ হিসেবেই স্বীকৃতি চাইছে রাজ্য। অন্যান্য চালের থেকে বহুগুণ আলাদা এই চাল। এই চালের প্রধান চরিত্র হলো ধানটির রং কালো ও অত্যন্ত সুগন্ধি। এর গড়নও সুন্দর ও চাল ফোটালে ঝরঝরে ভাত হয়। বাংলার জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং ও আলিপুরদুয়ারের কিছু অংশে এই চালের উৎপাদন হয়।
চুঁচুড়া ধান্য গবেষণাকেন্দ্রের প্রবীণ গবেষক ডঃ বিজন অধিকারীর মতে, জিআই তকমা পেতে গেলে প্রথমেই প্রমাণ করতে হয় যে এই প্রোডাক্টটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই তৈরি হয়৷ বা সেই নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনজীবনের সঙ্গে তার গভীর যোগাযোগ আছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণাপত্র থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়া, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের লোকজীবনের সঙ্গে এই চালের সম্পর্ক বেশ নিবিড়। এমন সুগন্ধী চাল খুবই কম পাওয়া যায়।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment