মালদায় আম প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে জোরালো দাবি বাংলা পক্ষের
ভারতের অন্যান্য যে কোনো জায়গার আমের তুলনায় মালদার আম ভীষণ সুস্বাদু। বিশেষত মালদার কাঠাল বলে কিছু অঞ্চল রয়েছে সেই অঞ্চলের মাটির কারণে সেখানকার আম সুস্বাদু৷ তাছাড়া এখানকার ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু আমগাছ হওয়ার জন্য উপযুক্ত। আর একটি কারণ হচ্ছে এখানে বেশ কিছু প্রকৃতির আম পাওয়া যায়, যেমন- লক্ষণভোগ, ল্যাঙড়া, ফজলি, হিমসাগর যা ভারতের অন্য কোনো জায়গায় পাওয়া যায় না।
মালদায় আম প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে জোর দেওয়ার দাবি বাংলা পক্ষের। মালদার আমকে আরো বেশি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করলে জেলার অর্থনীতি বদলে যেতে পারে বলে মতামত প্রকাশ করেছে বাংলা পক্ষ মালদা জেলা।
মালদা জেলায় উৎপাদিত বাংলার নিজস্ব জাতের আম হলো লক্ষণভোগ আম, ফজলি আম ও হিমসাগর আম। এই তিন প্রকার আমে রয়েছে জিআই বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন ট্যাগ। বিদেশের বাজারেও এই আমগুলোর বিশেষ চাহিদা আছে। ফলে আম চাষে অধিক গুরুত্ব দিলে আমকে ঘিরে মালদার অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে যাওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। আমের বাজারে মূলত দুই ধরণের দ্রব্য বিক্রি হয় যথা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি দ্রব্যের মধ্যে পড়ে আমের মণ্ড, আম গুঁড়ো, কাঁচা আম, ম্যাঙ্গো কনসেন্ট্রেট এবং সেকেন্ডারি দ্রব্যের মধ্যে পড়ে জ্যাম, ম্যাঙ্গো ক্যান্ডি, ম্যাঙ্গো স্কোয়াস, ক্যান এন্ড ফ্রোজেন স্লাইসেস, আম আচার, আম আইসক্রিম, আম কুলফি, আম জেলি, ম্যাঙ্গো মেল্ট, ম্যাঙ্গো ওয়াইন, আম লস্যি, ম্যাঙ্গো গ্লেজিংস, আম সস, আম ককটেল, ম্যাঙ্গো বাটার প্রভৃতি। এছাড়াও আম জাতীয় দ্রব্যের চার ধরণের প্যাকেজিং হয়ে থাকে তা হলো ক্যান, জার, বোতল ও পাউচ। অতএব আম জাতীয় দ্রব্য ও তার প্যাকেজিং উভয় শিল্পেরই একটা বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। সারা বিশ্বে ২০২০ পর্যন্ত আমের মার্কেট সাইজ ছিল ১৮.৬৫ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং, সারা বিশ্বেই আম বিক্রির একটা সুযোগ রয়েইছে।
মালদা বাংলা পক্ষের নেতৃত্ব রফিক আহমেদ জানান "মালদা জেলার আম শুধু ভারত বিখ্যাত নয়, এই জেলার আম বিশ্বের দরবারে সমাদৃত। এই জেলায় আম চাষকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ তার জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। মালদায় প্রায় চারশো প্রজাতির আম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু আম বিদেশে রপ্তানি হয়। মালদা জেলাকে কেন্দ্র করে আম প্রক্রিয়াকরণ কিছু শিল্প গড়ে উঠেছে ঠিকই৷ কিন্তু এই জেলায় আম প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের আরো ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।"
আম প্রক্রিয়াজাত পণ্যের উৎপাদন প্রসঙ্গে বাংলা পক্ষের তরফে সারা বছর জুড়েই কৃষক থেকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা প্রচার চালানো হয়। সংগঠনের সদস্যদের মতে সরকারি ভাবে এই বিষয়ে নজর দেওয়া হলে একদিকে জেলায় বেকার সমস্যার সমাধান হবে তেমনই এই ব্যবসায় আরো বেশি বাঙালি ব্যবসায়ী যোগদান করবেন৷ ফলে জেলার তথা রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
রফিক আহমেদ এক্ষেত্রে কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ব্যবসায় ইচ্ছুক মালদা জেলার তরুণ প্রজন্মকে আম নিয়ে ব্যবসার বিষয়ে সরকারের তরফে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন। একই সাথে বিশেষণ কমিটি তৈরি করে মালদার আম ও আম প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বাজার তৈরি করা দরকার বলে তিনি মতামত দিয়েছেন।
রফিক আহমেদ বাংলার আম শিল্পের ব্যাপারে কিছুটা আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। তার মতে, "তরুণ প্রজন্ম যদি বাংলার আম ব্যবসার প্রতি গুরুত্ব না দেয় তাহলে বাংলার আমের ব্যবসা চলে যাবে এ রাজ্যের বহিরাগত মানুষদের হাতে। এমনটা যাতে না হয় তার জন্য তরুণ প্রজন্ম ও সরকারকে বাংলার আমের ব্যাপারে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করতে হবে।"
আমের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারকে জোর দিতে হবে। কীভাবে উন্নতমানের চারগাছ বানানো যায়, কীভাবে আমের গাছগুলো মজবুত ও সতেজ হবে, কীভাবে জৈব সারকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে, ইটভাটার পাশে আম বাগান হলে সেখানে কীভাবে দূষণ রোধ করা যাবে--- এই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের ভাবনাচিন্তা করার সময় এসে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে বাংলা পক্ষ।
সরকারের কাছে বাংলা পক্ষের দাবি, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হোক মালদা জেলার আম চাষ ও আম প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। একই সঙ্গে আম প্রক্রিয়াজাত পণ্যে মালদা জেলাকে ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য প্রয়াস শুরু হোক।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment