বিশ্বভারতীর বুকে আবারো উঠে এলো হিন্দি আগ্রাসনের অভিযোগ
বিশ্বভারতী এখন প্রায়ই বিতর্কের কেন্দ্রে। গত বছর মার্চে বিশ্বভারতীর লেটারহেডে বাংলা না রাখার জন্য তৈরি হয় বিতর্ক। মাসখানেক আগে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে প্রাচীর তোলা নিয়ে তীব্র দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সাথে বোলপুরবাসীদের। সেই বিতর্ক কাটতে না কাটতেই বন্ধ করে দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শতাব্দী প্রাচীন শান্তিনিকেতন প্রেস ক্লাব। এরপর দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত ১০৪ বছরের প্রতিষ্ঠান 'আলাপিনী মহিলা সমিতি'র নতুন বাড়ি ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে দখল করার নির্দেশ দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই সমিতির মহিলারা বাড়ি ছাড়তে রাজি হননি। সমিতির সকল মহিলারা প্রতিবাদে সামিল হন। এরপর ১ লা জানুয়ারি সমিতির বাড়িগুলোতে তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিশ্বভারতীতে 'আলাপিনী মহিলা সমিতি' নিয়ে যখন প্রবল বিতর্ক চলছে তার মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো আরেক বিতর্ক। এবার বিশ্বভারতীতে হিন্দি আগ্রাসনের অভিযোগ তুললো বিশ্বভারতীর পড়ুয়া ও প্রাক্তনীর একাংশরা। তারা এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, রতনপল্লির নবনির্মিত মার্কেট ও মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালার সামনে সম্প্রতি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে তিনটি নতুন সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। এই সাইনবোর্ডগুলোকে ঘিরে প্রতিবাদের ঝড় বইছে।
বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও রতনপল্লির সাইনবোর্ডের বাংলা বানান এবং মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালার সামনের সাইনবোর্ডে হিন্দি আগ্রাসনের অভিযোগ উঠছে। ভুল বাংলা বানান নিয়ে বিশ্বভারতীর পড়ুয়া ও প্রাক্তনীদের বক্তব্য হলো "শান্তিনিকেতন রবি ঠাকুরের আপন দেশ, সেখানে ভুল বানান লেখা প্রতিষ্ঠানের সুনামের জায়গায় দুর্নাম বহুগুণ বৃদ্ধি করছে। বিশ্বভারতীর বর্তমান প্রশাসন বানানের ব্যাপারে মোটেও যত্নশীল নয়। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বাংলা ভাষাকে কোণঠাসা করার চক্রান্ত করছে। যেটা কখনোই কাম্য নয়।"
মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালার সামনের সাইনবোর্ডে জায়গার নাম লেখা হয়েছে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে। অথচ পাঠশালার নাম উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাকে ব্রাত্য রেখে কেবল হিন্দিতে। এর প্রসঙ্গে এক পড়ুয়া বলেন "ভারতবর্ষের নানান জায়গাতে আঞ্চলিক সংস্কৃতির ওপর হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতির যে আগ্রাসন চলছে তার প্রভাবে বিভিন্ন সাইনবোর্ডে শুধু হিন্দি ভাষার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।"
বিশ্বভারতীয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের রাস্তার ওপর যে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে তাতে লেখা "বিবেকানন্দ সরণি উদঘাটিত হোল"। এই প্রসঙ্গে বাংলা বিভাগের পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন যে "বাংলাতে 'হল' ও 'হলো' এই দুটো শব্দ ব্যবহৃত হয়। কখনো 'হোল' লেখা হয়না। বাংলাতে 'হোল' বলে কোনো শব্দ নেই।" কেউ কেউ আবার বলছেন "সাইনবোর্ডে এমন বাংলা লেখা ইচ্ছাকৃত ভুল নয়। এটা সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিয়েই লেখা হয়েছে।" একইসঙ্গে 'উদঘাটিত' শব্দটি নিয়ে আপত্তি তুলে বোলপুরবাসীরা জানাচ্ছেন যে "রাস্তাটি ওখানে আগের থেকেই ছিল। ৪ ঠা পৌষ শুধু রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে। রাস্তার নামকরণ আর রাস্তা উদঘাটন এক জিনিস নয়। রতনপল্লির 'ভারততীর্থ' এর নিকটবর্তী সাইনবোর্ড নিয়েও ঘোর বিতর্ক চলছে। এতোকিছুর পরও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ নিশ্চুপ।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment