বাংলা পক্ষের সহযোদ্ধার একাকী লড়াইতে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক পাস বইতে বাধ্য হলো বাংলা হরফ আনতে
বাংলা ভাষার জন্য লড়াই। যে বিষয়টাকে অনেকে গুরুত্ব দিতে চান না। অনেকে তো আবার এই বিষয়টাকে মজা করে হেসেই উড়িয়ে দেয়। কেউ কেউ তো মাতৃভাষা নিয়ে খিল্লি করতেও পিছুপা হয়না। কিন্তু অন্তর দিয়ে একবার ভেবে দেখুন মাতৃভাষা নিয়ে খিল্লি করাটা কী ঠিক জিনিস? একজন বাঙালি হিসেবে বাংলা ভাষার অপমান কী মেনে নেওয়া যায়? মাতৃভাষাকে ভালোবাসা তো আর অন্যায় নয়। মাতৃভাষা নিয়ে লড়াই করাও তো পাপ নয়।
সত্যি কথা বলতে বাঙালির স্বজাতি প্রেম হারিয়ে যাচ্ছে। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একটি অসাধারণ উক্তি দিয়েছিলেন বাঙালি জাতি প্রসঙ্গে। তিনি বলেন "ভেতো বাঙালি বাহুবলে বিজাতীয়দের কাছে ল্যাজে-গোবরে হতে পারে, বরং বাক্যবল-ই পারে নির্জীব বাঙালি জাতিকে লঙ্কার ঝাল খাইয়ে অথবা ব্যঙ্গের চাবুকে চাঙ্গা করতে ও স্বজাতিপ্রেমের আবেগে হাবুডুবু খাওয়াতে।" কথাটি যে কতোটা তিনসত্য তার প্রমাণ আজকে এ রাজ্যের বাঙালি দিতে শুরু করেছে।
বাঙালির বাক্যবল লঙ্কার ঝাঁঝের মতো ঝাঁঝালো হয়ে উঠলে বাংলা ভাষা তার মর্যাদা ফিরে পায়। বাঙালি বাক্যবলের জোরে যে বাংলা ভাষার মর্যাদা আদায় করতে পারে তার জীবন্ত দর্শন পাওয়া গেল ঠাকুরপুকুরে। যে ঘটনা থেকে বাঙালির অনেক শিক্ষা নেওয়ার আছে। ঠাকুরপুকুরের কমবয়সী এক তরুণ বিপ্লব পাল যেটা পেরেছে তাতে তার প্রতি যে-কোনো বাঙালির গর্ব হতে পারে। সদ্য কৈশোর পার করা এই ছেলেটি দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করেছে ইউনিয়ন ব্যাঙ্কে বাংলায় পরিষেবার দাবী নিয়ে।
বিপ্লব পাল বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন বাংলা পক্ষের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে ঠাকুরপুকুর এলাকায় পরিচিত। ইউনিয়ন ব্যাঙ্কে বাংলা ভাষায় পরিষেবার দাবীতে অপমানিত হয়ে ব্যাঙ্ক থেকে কয়েকবার ফিরেও আসতে হয়েছে তাকে। ব্যাঙ্কের কল সেন্টারে তুমুল তর্কাতর্কিও করতে দেখা গেছে তাকে। অচেনা ফোন থেকে মন্দ ভাষাতে ধমকও খেতে হয়েছে তাকে। তার এতোটাই অদম্য জেদ যে সে সরাসরি ব্যাঙ্কের গ্রাহক ও কলসেন্টারের কর্মীদের বলেছে বাংলায় লেখা না থাকলে কোনো নথি সে ব্যবহার করবে না।
মাসের পর মাস গড়িয়েছে তবুও সে তার উদ্দেশ্য থেকে একবারও সরে যায়নি। নিত্যদিনের মতো সে নিয়মিত ব্যাঙ্কে যাতায়াত করে গ্রাহকদের ব্যাপারটা বোঝাতে থাকে। অবশেষে বিপ্লব পাল তার লড়াইতে জয়ী হলো। ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের সমস্ত পাসবইতে এসেছে বাংলা। এমনকি ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা আশ্বাস দিয়েছেন যে তাদের কলসেন্টারে বাঙালি প্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। বিপ্লব পালকে ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের মুম্বাই কলসেন্টারের লোকেরা এখন এক নামে চিনে গেছে।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment