বিশে বিষে বিষক্ষয়, দুঃসময়ের বছরে আশা জাগানো সেরা দশ বাংলা ওয়েব সিরিজ
করোনা পরিস্থিতির জন্য বাংলা ছবির ক্ষেত্রে ২০২০ সবচেয়ে খারাপ বছর হলেও বাংলার ওয়েব সিরিজের জন্য সবচেয়ে ভালো এই বছরটা। উন্নতমানের কন্টেন্ট সহযোগে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু ওয়েব সিরিজ। হইচই, আড্ডা টাইমসের মতো একাধিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলা ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেয়ে থাকে। এ বছরের মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব সিরিজ থেকে আমরা বেছে নিয়েছি সেরা দশটি ওয়েব সিরিজকে। চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক আমাদের বিচারে এ বছরের সেরা দশটি ওয়েব সিরিজ কোনগুলি।
১. তানসেনের তানপুরা- বাংলা ওয়েব সিরিজের ইতিহাসে মাইলস্টোন তৈরি করেছে 'তানসেনের তানপুরা'। এটি পরিচালক সৌমিক চট্টোপাধ্যায়ের অসাধারণ পরিচালনা ও লেখক সৌগত বসুর লেখা জমজমাট গল্প ও স্ক্রিপ্ট এবং বিক্রম চ্যাটার্জী ও রূপসা চ্যাটার্জীর মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের যুগলবন্দীতে গড়ে ওঠা মনোমুগ্ধকর ওয়েব সিরিজ। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও ট্রেজার হান্টের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে ছবির চিত্রনাট্য। এই ওয়েব সিরিজ শুধু বাংলাতেই নয় গোটা ভারতবর্ষের মধ্যে এ বছরের সেরা ওয়েব সিরিজ। এই ওয়েব সিরিজকে গবেষণামূলক ওয়েব সিরিজও বলা যায়। বাংলা ওয়েব সিরিজ সম্পর্কে মানুষের মনে যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল সেই ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটেছে এই ওয়েব সিরিজটির মধ্য দিয়ে।
২. শব্দজব্দ- বহুদিন পর্যন্ত মনে রাখার মতো আরেকটি বাংলা ওয়েব সিরিজ হলো 'শব্দজব্দ'৷ মাত্র চারটে থেকে পাঁচটা চরিত্র নিয়েও যে পর্দায় কত ভালো গল্প বলা যায় তার আভাস দিয়েছিলেন এই সিরিজে পরিচালক সৌরভ চক্রবর্তী। যারা বাংলা ওয়েব সিরিজ দেখতে ভালোবাসেন তাদের জন্য একটা নজরকাড়া ওয়েব সিরিজ হলো 'শব্দজব্দ'। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরানার ওয়েব সিরিজ ছিল এটি। সৌগত সিনহা নামের একজন লেখক যার স্মৃতিভ্রম ঘটছে। তিনি গুলিয়ে ফেলছেন যে কোনটা বাস্তব আর কোনটা গল্পের জগৎ। তার এই সুযোগ নিয়ে তার কাছের প্রিয়জনরা তাকে ঠকাতে থাকে। এমন অবস্থা থেকে তিনি কীভাবে পরিত্রাণ পাবেন সেই গল্পকে অতি সুন্দর করে ওয়েব পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে।
৩. রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ থ্রি- এক রহস্যময়, পরাবাস্তব এবং কল্পিত জগতের আখ্যান হলো 'রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ থ্রি'। এটি পরিচালক অভিরূপ ঘোষ পরিচালিত এ বছরের আরো একটি জমজমাট সিরিজ। অল্প বাজেটে দূর্দান্ত ডায়লগ, শক্তিশালী গল্প ও ভরপুর অ্যাকশনধর্মী সিরিজও যে নির্মাণ করা বাংলাতে সম্ভব তারই জানান দেয় 'রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ থ্রি'। এই সিরিজটি এতোটাই চমৎকার যে সিরিজটির শুরু থেকে শেষ অবধি নিঃশ্বাস ফেলারও উপায় নেই।
৪. লালবাজার- পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল পরিচালিত এক রুদ্ধশ্বাস অ্যাকশন ভরপুর ক্রাইম থ্রিলার হলো 'লালবাজার'। কলকাতা শহরের আড়ালে থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডের সমস্ত অপরাধ ও অপরাধ দমনে হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের পাঁচ অফিসারের যাত্রা হলো এই সিরিজের গল্প। বাংলা তথা গোটা দেশজুড়ে সাড়া জাগিয়েছে এই সিরিজটি। বাংলাতে এমন ক্রাইম থ্রিলার এর আগে একটাও হয়নি বললেই চলে৷
৫. ব্যোমকেশ সিজন ফাইভ- ব্যোমকেশ সিরিজের গল্প 'খুঁজি খুঁজি নারী' ও 'দুষ্টচক্র' অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এই সিরিজটি। পরিচালক সৌমিক হালদারের ব্যোমকেশের দুটো ছোটো গল্পকে একাকার করে একটা বড়ো স্কেলে তাকে রূপদানের প্রচেষ্টায় ছিল বেশ নতুনত্ব। আর সাথে ছিল লেখক সৌগত বসুর চিত্রনাট্য এবং ব্যোমকেশরূপী অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মনোগ্রাহী অভিনয় এককথায় দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে।
৬. তকদীর- শ্বাসরুদ্ধ থ্রিলার হিসেবে নজর কেড়েছে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব সিরিজ 'তকদীর'। এই ওয়েব সিরিজে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। এই ওয়েব সিরিজে যে বিষয়গুলো নাড়া দেয় তা হলো লাইটের অবর্ণনীয় কাজ, বিজিএম ছাড়া কলাকুশলীদের অভিনয়, দূর্দান্ত ডায়ালগ ডেলিভারি ও যত্ন সহকারে দৃশ্য নির্ধারণ প্রভৃতি। তরুণ পরিচালক সৈয়দ আহমেদ শাওকির পরিচালনা করেছেন এই সিরিজটি। প্রথম ওয়েব সিরিজেই তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার শক্তিশালী পরিচালনা, গল্পের মতো গল্প এই সিরিজকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। আয়নাবাজির পর চঞ্চল চৌধুরীর কেরিয়ারে মাইলস্টোন হয়ে থাকবে 'তকদীর'।
৭. উৎসব-এর পরে- পরিচালক অভিনন্দন দত্তের কাহিনী ও পরিচালনায় আট পর্বের ওয়েব সিরিজ 'উৎসব-এর পরে'। এই সিরিজের গল্প হলো এক বনেদি বাড়িতে সময়ের নিয়মে যা চাপা পড়ে গিয়েছিল। আজ হঠাৎ করেই বেরিয়ে পড়ে অন্দরমহলের নিষিদ্ধ প্রেম অথবা রাজনৈতিক পালাবদলের ইতিহাস। কৌশিক সেন, ঋতব্রত মুখার্জি ও ঐশ্বর্য সেনের যুগলবন্দীতে এক ব্যতিক্রমী ওয়েব সিরিজ হলো 'উৎসব-এর পরে'।
৮. কর্কট রোগ- ইন্দ্রনীল সান্যালের উপন্যাস 'কর্কটক্রান্তি' অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বাংলা ওয়েব সিরিজ 'কর্কট রোগ'। পরিচালক উৎসব মুখোপাধ্যায় পরিচালনা করেছেন এই সিরিজটি। চিত্রাঙ্গদা শতরূপা, রাজেশ শর্মা ও ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের নজরকাড়া অভিনয় সিরিজটিকে আলাদা রূপ দেয়। সমাজের এক অদ্ভুত ক্ষতকে তুলে ধরা হয়েছে চিত্রনাট্যে। বিয়াস বন্দোপাধ্যায় নামের একজন অটপসি সার্জেন যিনি ময়নাতদন্ত করেন৷ তিনি হঠাৎ ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে পড়েন। খুব অল্প সময়ে বিয়াস বেশ কিছু দেহের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে তাদের মৃত্যুতে তিনি খুঁজে পান একটা যোগ সূত্র৷ এ বছরে ঠিক যতগুলো ভিন্নধর্মী বিষয় নিয়ে বাংলা ওয়েব সিরিজ নির্মিত হয়েছে তার মধ্যে 'কর্কট রোগ'ও অন্যতম৷
৯. দময়ন্তী- রহস্যের সন্ধানে ওয়েব দুনিয়াতে মহিলা সত্যান্বেষী হিসেবে মাত করেছে 'দময়ন্তী'। বাংলার প্রথম মহিলা ডিটেকটিভ ফ্র্যাঞ্চাইজি ওয়েব সিরিজ হলো 'দময়ন্তী'। পরিচালক অরিত্র সেন ও রোহন ঘোষ পরিচালনা করছেন এই সিরিজটি। 'দময়ন্তী' চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে অভিনেত্রী তুহিনা দাসকে। এক মহিলা সত্যান্বেষীর গল্পে জমে ওঠে এই সিরিজ। চলতি বছরের মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব সিরিজের মধ্যে এই সিরিজও লোকমুখে অধিক প্রচারিত হয়।
১০. কালী টু- পরিচালক অরিত্র সেনের ওয়েব সিরিজ 'কালী টু'। এক মায়ের কঠিন লড়াই এই সিরিজের মূল বিষয়বস্তু। যে তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য নিজের হাতে বন্দুক তুলে নেয়। এই ছবিতে অভিনেত্রী পাওলি দামের অভিনয় সবার নজর কেড়েছে।
আমরা এ বছরের সেরা দশ ওয়েব সিরিজ হিসেবে যে ওয়েব সিরিজগুলো বেছে নিয়েছি। সেইগুলো কোনো ক্রমানুসারে সাজানো হয়নি কারণ কোনো ওয়েব সিরিজকে ক্রমানুসারে সাজানো যায়না। প্রত্যেক ওয়েব সিরিজেরই রকমারি দিক থাকে।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment