Header Ads

কলকাতার কাছেই আছে বাংলার এক ময়ূরের গ্রাম


আধুনিক সভ্যতার আগ্রাসন ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চরম সংকটে আমাদের দেশের জাতীয় পাখি ময়ূর। পুরো দেশে যখন ময়ূরের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব দেখা যাচ্ছে সেখানে বাংলার আস্ত একটি গ্রামের বাসিন্দারা ময়ূরদের সংকটমোচন থেকে রক্ষা করার যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে। যে গ্রামে কান পাতলেই ময়ূরের মিও মিও আওয়াজ শোনা যায়। যে গ্রামের গাছে-গাছে, বাড়ির উঠোনে, বাগানে ময়ূরদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। 


কলকাতা থেকে কিছু দূরেই অবস্থিত এই গ্রাম। হুগলি জেলার চুঁচুড়া শহর থেকে সাত-আট মাইল দূরে দিল্লি রোড সংলগ্ন পোলবা থানার অন্তর্গত রাজহাট গ্রাম, যাকে বলা হয় বাংলার একমাত্র ময়ূরের গ্রাম। আপনি যদি ময়ূরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন তবে আপনাকে উত্তর ভারতে ভ্রমণের দরকার নেই। ঠিক এখানেই আপনার নিজের ঘরের কাছেই আছে ময়ূর মহল। রাজহাট ও পার্শ্ববর্তী চৌতারা, গান্ধিগ্রাম ও সাহেব বাগান প্রভৃতি গ্রামেও খোলা প্রাঙ্গণে ময়ূরদের বিচরণ লক্ষ্য  করা যায়। রাজহাট গ্রামের বাসিন্দারা ময়ূরদের নিয়মিত রক্ষা করে চলেছেন চোরাশিকারীদের হাত থেকে। ময়ূরগুলো যাতে সুস্থ ও সবল থাকে তার জন্য গ্রামবাসীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা 'ময়ূর মহল' নামে ময়ূরদের নিয়ে একটি উদ্যান গড়ে তুলেছেন।  

রাজহাট গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কুন্তী নদী। গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুন্তী নদী ও পাশের গ্রাম দেবানন্দপুরে বইছে সরস্বতী নদী। এই দুটো নদীর মধ্যিখানের অঞ্চলেই ময়ূরের বসবাস। রাজহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণেই ময়ূরদের বংশবিস্তার ঘটে চলেছে। আরো একটি বড়ো কারণ হলো রাজহাট গ্রাম গোসাপের বাসভূমি। এছাড়াও পোলবা-দাদপুর ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে ফল থেকে শুরু করে হরেক রকমের সব্জী উৎপাদিত হয়। যার ফলে ময়ূরদের খাবারের অভাব হয়না। খাবারের পাশাপাশি এদের বিচরণ করার জন্য রাজঘাট গ্রামে প্রচুর আমবাগান ও বাঁশবাগান রয়েছে যা তাদের বসবাসের উপযুক্ত স্থান। 

তবে গ্রামবাসীদের অভিযোগ যে এখানে রাত্রিবেলায় বিপথগামী কুকুরগুলি ময়ূরের খোঁজ করে। অনেক সময় কুকুরদের শিকারও হয়ে যায় এক দুটো ময়ূর। আবার অতিরিক্ত তাপ এবং বৃষ্টির কারণেও অনেক ময়ূর মারা যায়। ময়ূরগুলি যেহেতু একটি উচ্চতায় উঠতে পারে না এবং খুব দ্রুত চলতেও পারে না, ফলে বন্যপ্রাণীর হাতে মারা পড়ে এরা। এই পাখিগুলিকে অবিলম্বে সংরক্ষণ এবং তাদের জন্য এলাকায় একটি অভয়ারণ্য তৈরি করা একেবারে প্রয়োজনীয়। স্থানীয়রাও মনে করেন, এলাকায় সচেতনতা তৈরি করতে বন বিভাগের নিয়মিত শিবির করা উচিত।

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments