Header Ads

প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ না থাকলে জন্ম হতো না ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের


কলকাতায় গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট। ১৯৩১ সালে স্থাপিত ভারতের অন্যতম ঐতিহ্যপূর্ণ এই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিসংখ্যান গবেষণাতে বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি। এই প্রতিষ্ঠানের আদলে উত্তর ক্যারোলিনার বিখ্যাত গবেষণা ত্রিভুজে উত্তর আমেরিকার প্রথম পরিসংখ্যান তত্ত্বের প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। 


কলকাতার বরানগরে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠান। চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি ও তেজপুরে এর চারটি শাখা রয়েছে। এছাড়াও হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই, পুনে, গিরিডি, বরোদা ও কোয়েম্বাটুরে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। প্রশান্তচন্দ্র মহালানবিশ হলেন এই বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। যিনি না থাকলে মহানগরী কলকাতার বুকে এতোবড়ো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা  সম্ভব ছিল না। ১৯৩১ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর স্বপ্নপূরণ হয় প্রশান্তচন্দ্র মহালানবিশের। কলকাতাতে তৈরি হলো ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট। 

১৮৯৩ সালের ২৯ শে জুন নীরোদবাসিনী দেবী ও প্রবোধচন্দ্র মহলানবিশের প্রথম সন্তান প্রশান্তচন্দ্রের জন্ম হয়। সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গুরুচরণ মহলানবিশ প্রতিষ্ঠিত বয়েজ স্কুলে প্রশান্তচন্দ্রের শিক্ষাজীবন আরম্ভ হয়। তিনি ১৯১২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় সাম্মানিক বিএসসি পাশ করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষালাভ শেষ করে তিনি বিলেত পাড়ি দেন ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ট্রেন মিস করে পরবর্তীতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজে যোগ দেন। এখানেই শ্রীনিবাসন রামানুজনের সাথে তাঁর বিশেষ সখ্যতা হয়। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে তিনি 'ট্রাইপস' পাশ করেন ও তাতে তিনি প্রথম স্থান দখল করেন।  তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই সম্মান অর্জন করেছিলেন।  

দেশে ফিরেই প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। ইতিমধ্যে কলকাতায় তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় নির্মলকুমারী দেবীর ও ১৯২৩ সালে তাঁদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। দেশে ফেরার পথে তিনি নিয়ে এসেছিলেন কার্ল পিয়ারসনের বায়োমেট্রিক জার্নালটির নয়খানা খণ্ড, যেগুলি এক রকম ভাবে তাঁর জীবনের মোড় পরিবর্তন করে দিয়েছে বলা চলে। এই বায়োমেট্রিক জার্নালটির মাধ্যমেই তাঁর মধ্যে স্ট্যাটিস্টিক সম্পর্কে অদম্য প্রেম ও বহুবিধ নতুন সম্ভাবনার জন্ম নেয়। 

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ট্যাটিসটিক্স সংক্রান্ত পড়াশোনা বা গবেষণা কোনোটারই সুযোগ ছিল না। বিশ্বের স্ট্যাটিস্টিক্সের ক্ষেত্রে ভারতীয়রা যে অগ্রগণ্য তার মূলে রয়েছে প্রশান্তচন্দ্রের উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণা। ১৯৩২ সালে প্রশান্তচন্দ্রের রাশিবিজ্ঞানের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে দুটি মৌলিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ভারতীয় ছাত্রদের রাশিবিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সুবিধার জন্য প্রশান্তচন্দ্র ১৯৩১ সালে তাঁর জীবনের অক্ষয় কীর্তি 'ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments