Header Ads

ভারতের প্রথম অস্থায়ী সরকার গড়ে তোলেন বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্ত


'ভারত ছাড়ো আন্দোলন' এ উত্তপ্ত গোটা ভারত। ব্রিটিশদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা। এমনই এক কঠিন সময়। যে সময়ের প্রাক্কালেও দাঁড়িয়ে তাম্রলিপ্ত বা বর্তমান তমলুক- এর মাটিতে দেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গড়ে তুললেন বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্ত। ১৯৪২ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর গঠিত হয় এই সরকার। 'তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার' নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল তাঁর গঠিত নিজস্ব সরকার। গোটা ভারতবর্ষের কেউ যেখানে কোনো অস্থায়ী সরকার গড়তে পারেন নি সেখানে তিনি অখণ্ড মেদিনীপুর জেলা থেকেই গঠন করেছিলেন একটি অস্থায়ী সরকার। এই সরকারের অস্তিত্ব ছিল ১৯৪৪ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। 


এই সরকারের বিভিন্ন বাহিনী গঠিত হয়। এই জাতীয় সরকার সে সময় পৃথক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল৷ আইন-শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিচার, কৃষি, প্রচার, সমর ইত্যাদি বিভাগে পৃথক পৃথক সচিব নিয়োগ করা হয়েছিল। সবার উপরে ছিলেন সর্বাধিনায়ক বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্ত। অর্থসচিব ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন সুশীলকুমার ধাঁড়া, বিচার বিভাগীয় প্রধান প্রফুল্ল কুমার বসু, খাদ্য দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন সতীশচন্দ্র সাহু, প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন প্রহ্লাদ কুমার প্রামাণিক। 'তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার' এর মুখপত্র ছিল 'বিপ্লবী' পত্রিকা। দেশ রক্ষার জন্য তৈরি করা হয় বিদ্যুৎ বাহিনী ও ভগিনী সেনা। 

সতীশচন্দ্র সামন্ত প্রতিটি থানায় একজন করে থানা অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। তমলুক থানার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিখ্যাত বিজ্ঞানী মণি ভৌমিকের পিতা গুণধর ভৌমিককে। সুতাহাটা থানার দায়িত্ব দেওয়া হয় জনার্দন হাজরাকে, মহিষাদলের দায়িত্ব দেওয়া হয় নীলমণি হাজরাকে ও নন্দীগ্রাম থানার দায়িত্ব দেওয়া হয় কুঞ্জবিহারী ভক্ত দাসকে। 

ব্রিটিশদের নাকের ডোগার আড়ালে গোপনে চলতো এই সরকার৷ সতীশচন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে নারকেলদহ গ্রামে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এক গোপন বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের মাধ্যমেই ব্রিটিশ শাসন অস্বীকার করে এই স্বাধীন সরকারটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সফলভাবে কাজ করেছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণকার্য, বিদ্যালয় অনুদান প্রদান ও বিদ্যুৎ বাহিনী নামে একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন ছিল এই সরকারের প্রধান উল্লেখযোগ্য  কীর্তি৷ 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments